হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে বিনামূল্যে দিচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তা বিনামূল্যে ঝুঁকিতে থাকা পেশাজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষদের দিচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন।

নিজস্ব প্রতিবেদকও চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2020, 04:23 PM
Updated : 20 March 2020, 04:57 PM

ছাত্র সংগঠনটির এই উদ্যোগ নানা মহলে প্রশংসিত হওয়ার পর যুব ইউনিয়ন নেতাকর্মীরাও শুক্রবার এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন।

বরাবরই ঝড়, বন্যাসহ বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চার দিন ধরে তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এরইমধ্যে ৫০ মিলিলিটারের ৯ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তা বিলি করেছেন।

ফার্মেসি, রসায়ন ও প্রাণ রসায়নের শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন ছাত্র ইউনিয়নের হ্যান্ড স্যানিটাইজার

ঢাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে রোগীদের যে চারটি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কাছ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়েছেন বলে জানান অনীক।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা টেলিভিশন সাংবাদিকদের একটি অংশও তাদের কাছ থেকে এই জীবাণুনাশক নিয়েছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের তৈরি করা এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও

এর বাইরে তেজগাঁওয়ের বউবাজার বস্তি, পল্টনের হকার ও কামরাঙ্গীরচরের হাজার দেড়েক রিকশা চালক ও গ্যারেজ কর্মীকে বিনামূল্যে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর, মৌলভীবাজার ও শরীয়তপুরে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শহীদ মুনীর চৌধুরী কনফারেন্স হল ও তার সামনের জায়গায় এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি, রসায়ন ও প্রাণ রসায়নের শিক্ষার্থীদের ২৫ জনের একটি দল প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮-৯টা অবধি  এগুলো তৈরি করছেন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ৭০%, গ্লিসারিন, লেমন ওয়েল ও ডিস্টিলড ওয়াটার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান অনীক রায়।

ঢাকায় শ্রমজীবীদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা

তারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির পদ্ধতি কোথা থেকে শিখেছেন জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উদ্যোগ নেয়। সেখানে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কাজ করা শিক্ষার্থীদের একটি অংশ, যারা ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত, তারা এসে এখানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু করেন।”

এর অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু কিছু সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো দিয়েই উপকরণগুলো কিনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে।

ঢাকায় নভেল করোনাভাইরাস রোগী ধরা পড়ার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়েছে। এই ফাঁকে স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণগুলোর দাম চড়েছে জানিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অনীক।

শুক্রবার ঢাকার পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে যুব ইউনিয়নের হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।

ছাত্র ইউনিয়নের এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় যুব ইউনিয়নও তা শুরু করেছে।

ঢাকার পাশাপাশি শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড়ে যুব ইউনিয়নের অস্থায়ী কার্যালয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি কার্যক্রম শুরু করা হয়।

সেখানে তৈরি এক হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিকালে চট্টগ্রামের নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামে যুব ইউনিয়ন কার্যালয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ছবি: সুমন বাবু

তাদের এই কার্যক্রম চলতে থাকবে জানিয়ে রিপায়ন বলেন, প্রতিদিন তারা অন্তত এক হাজার করে স্যানিটাইজার বিলি করবেন।

তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জীবানুরোধক এ পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফায় মানুষের কাছে বিক্রি করছে।”

স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা লোভীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে।