পাপিয়ার তথ্য চেয়ে ওয়েস্টিনকে দুদকের চিঠি

যে পাঁচতারা হোটেলে ডেরা বানিয়ে শামীমা নূর পাপিয়া নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন অভিযোগ উঠেছে, তার অনুসন্ধানে সেই ওয়েস্টিন হোটেলের কাছে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2020, 07:16 PM
Updated : 3 March 2020, 03:41 AM

যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক পাপিয়ার ওয়েস্টিন-সম্পৃক্ততার পেছনে প্রভাবশালী অনেকের মদদ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট মাসের পর মাস ভাড়া রেখে পাপিয়ার বানানো সেই ডেরায় কারা কারা যেতেন, সে বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশও হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাইছে।

পাপিয়াকে নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে এরপরই ওয়েস্টিনের হোটেলের কাছে দুদকের চিঠি গেল।

সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য।

পাঠানো চিঠিতে পাপিয়ার নিয়মিত হোটেলে থাকা ও খাওয়ার বিলের কপি, বিভিন্ন সময় হোটেল বুকিংয়ের নথিপত্র ও  কার কার নামে রুম বুকিং দেওয়া হত, সে সব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

প্রণব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিঠিতে ৮ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য দিতে বলা হয়েছে।”

‘দি ওয়েস্টিন ঢাকা’ ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের একটি হোটেল, যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী নূর আলী। তার সঙ্গে পাপিয়াসহ তার সঙ্গী তরুণীদের সঙ্গে একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

নূর আলীর সঙ্গে শামীমা নূর পাপিয়ার এই ভিডিও ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়।

ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, পাপিয়ার কারবারের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না।

পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় ওয়েস্টিনের মার্কেটিং কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাহউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “উনি (পাপিয়া) আমাদের স্যুইট নিয়েছিলেন।

“এটা বিশাল আকারের তো, উনার গেস্টরা সেখানে ছিলেন। তিনি কাদেরকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করেছেন কিংবা কতজন ছিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাবলিকলি প্রকাশ করা হোটেলের নিয়ম পরিপন্থি।”

ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল সুইট, যার প্রতিরাতের ভাড়া ২ হাজার ডলারের মতো,  ভাড়া করে পাপিয়া যৌনবাণিজ্য চালাতেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য, যারা গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেছিলেন, “তার (পাপিয়া) নামে ওই হোটেলের ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ সব সময় বরাদ্দ থাকত।

“হোটেলে নিয়মিত কয়েকজন তরুণী থাকত, যারা তার ‘কাস্টমারদের’ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। এজন্য তাদের মাসিক বেতন বরাদ্দ ছিল।”

গ্রেপ্তার পাপিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, তার বিবরণ অনুযায়ী মোট ৫১ দিন ওই কক্ষ ছিলেন তিনি। আর এ জন্য বিল মিটিয়েছেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৭ টাকা। আর এই হোটেলে এই সময়ের জন্য অবস্থানকালে বার ব্যবহারের জন্য ব্যয় করেছেন এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিদিন হোটেল বেয়ারাদের টিপস দিতেন ৮/১০ হাজার টাকা।

হোটেলের বিল পাপিয়া নগদে পরিশোধ করতেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলেছিল, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী যৌন বাণিজ্য ছাড়াও ‘অস্ত্র ও মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাত করে’ বিপুল সম্পদ গড়েছেন। 

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব হেফাজতে শামীমা নূর পাপিয়া

গ্রেপ্তারের পর যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত পাপিয়ার সম্পদের অনুসন্ধানে রোববার সংস্থার উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজকে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ হোটেল ওয়েস্টিন ছাড়াও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ডোম-ইনোকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে চিঠি দিয়েছেন।

ডোম-ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার ফ্ল্যাটের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এ চিঠিতে ইন্দ্রিরা রোডের পাপিয়ার যাতায়াত করা ফ্ল্যাটটির ভাড়া নাকি পাপিয়ার অথবা তার স্বামীর নামে কেনা, সে সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “পাপিয়ার সম্পদ, এসবের উৎস, বিদেশে অর্থ পাচার সবই অনুসন্ধানের আওতায় আছে। পাপিয়ার আশেপাশে যারা ছিল, তাদের দিকেও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে। তার সহযোগীরাও আইনের আওতায় আসবে।”