ভারতের পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নাগরিকত্ব আইন সংশোধন এবং এর জের ধরে গড়ে উঠা বিতর্কে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বাংলাদেশ ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2020, 07:39 PM
Updated : 26 Jan 2020, 07:39 PM

সীমান্তে উদ্বেগজনক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

রোববার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে মনে করে বাংলাদেশ সরকার। এ বিলকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

“আমরা বিশ্বাস করি, ভারত সরকার তার রজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সাথে তাদের দৃঢ় পারস্পরিক বিশ্বাস, সৌহার্দ্য ও বোঝাপড়ার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেবে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”

মন্ত্রী বলেন, “এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশের উপর কোন অযাচিত প্রভাব পড়বে না- সে নিশ্চয়তা ভারত সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে।”

ভারত সরকার সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন (সিএএন) সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দুসহ কয়েকটি ধর্মাবলম্বীদের তাদের দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

এই সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হিন্দুসহ এসব ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

তার আগে আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়, যাতে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়েন বহু মানুষ। আসামের অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অনেকে ওই রাজ্যে আবাস গড়েছেন।

নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ও নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে; বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় বেকায়কায় রয়েছে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধসহ যে কোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। উদ্বেগজনক কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

বিএনপির রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,“পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪টি আঞ্চলিক সংগঠন এবং তাদের নিজস্ব সশস্ত্র গ্রুপের সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে। এই গ্রুপগুলো পার্বত্য এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মতবিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায়শই দ্বিমুখী এবং কখনও ত্রিমুখী সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাহাড়ি এলাকায় স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।”

সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সংসদে বলেন, “বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৮০ হাজার, কুয়েতে ৫ হাজার, ইরানে দেড় হাজার, মিশরে ৪ চার দক্ষিণ কোরিয়ায় আড়াই হাজার প্রবাসী শ্রমিক রয়েছে, যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে।

“ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ অবৈধ প্রবাসীদের বৈধভাবে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ দিতে সৌদি সরকার গত বছরে ২২ ডিসেম্বর ‘স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রাম‘ ঘোষণা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় যেসব প্রবাসী ফেরত আসবে তারা পরবর্তীতে বৈধ ভিসা নিয়ে আবার সৌদি আরব যেতে পারবে।”

মন্ত্রী জানান, গত ২০১৬-১৮ সাল পর্যন্ত ৬ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদনের সুযোগ পায়। এর মধ্যে চার লাখ কর্মী বৈধতা লাভ করেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার কোনো প্রক্রিয়া চালু নেই। অবৈধ অবস্থানকারীদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় গত ৫ মাসে প্রায় ৫২ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছে।