মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অন্যতম বিচারক কায়সারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
মতিউর রহমান ও আনিসুল হক ছাড়া বাকি আটজন হলেন- কবির বকুল, শুভাশিস প্রামানিক, মহিতুল আলম পাভেল, শাহপরাণ তুষার, জসীমউদ্দীন তপু, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল।
মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গত ১ নভেম্বর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাত। মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলো। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কিশোর আলোরও প্রকাশক; আর কিশোর আলোর সম্পাদক হলেন আনিসুল হক।
সেদিন থানায় অপমৃত্যুর মামলার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাহাতের বাবা মুজিবুর ছেলের লাশ নিয়ে যান বলে মোহাম্মদপুর থানার তখনকার ওসি জি জি বিশ্বাস জানিয়েছিলেন। পরে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয় রাহাতকে।
এদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার জন্য কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করার পাশাপাশি কাছের এত হাসপাতাল থাকতে দূরের হাসপাতালে রাহাতকে নেওয়া এবং মৃত্যুর পরও অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ওঠে।
তবে এরপরও সমালোচনার পাশাপাশি ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলতে থাকে, প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন হয়, বিষয়টি আলোচনায় ওঠে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও।
তার মধ্যেই আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান গত ৬ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদকসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলা করেন। সেখানে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়।
আর্জিতে বলা হয়, সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা না করে এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনা ঘটার পর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টো পাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাহাতকে না নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
“এ মৃত্যু শুধু একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রদান করা হয়। লাশের পোস্ট মর্টেম ছাড়া মোহাম্মদ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।”
আড়াই মাস পুরো হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার সকালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি ছিল। গাফিলতির কারণেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে আবরার রাহাতের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনার সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে ১০ জনের নামেই প্রতিবেদন দিয়েছি।”
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক আসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত এবং কার কী দায় রয়েছে তা তদন্ত করার জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম।
“স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। যে ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল সেই ধারাতেই কিশোর আলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ জনকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আমরা এই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট।”