রবীন্দ্র সরোবরে প্রাণের নবান্ন

অগ্রহায়ণের সকাল মুখরিত হল লোকজ সুর, নৃত্য আর পালাগানে। সঙ্গে ছিল হরেক রকম পিঠা, নাগরদোলা, চরকি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2019, 11:12 AM
Updated : 28 Nov 2019, 11:19 AM

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তিন দিনব্যাপী ‘প্রাণ চিনিগুড়া চাল নবান্ন উৎসব’এর প্রথম পর্বটি এরকমই ছিল।

প্রথম পর্বে মঞ্চে লোকজসংগীত পরিবেশন করেন কানন বালা সরকার, সরদার রহম উল্লাহ, মীরা মণ্ডল। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সমস্বর। এইচ আর অনিকের নির্দেশনায় পথনাটক ‘আজব বাক্স’ মঞ্চস্থ করে চন্দ্রকলা থিয়েটার।

মঞ্চে লোকগান শোনার পর নবান্ন উৎসবে আসা নগরবাসীদের একাংশ খুদেদের নিয়ে চলে গেলেন সরোবরের কোণে নাগরদোলায় চড়তে।

খুদেরা চড়লো নাগরদোলা, চড়লো চরকিতে। তারপর মালপোয়া, ভাপা, পুলি চিতই- এমন হরেক রকমের পিঠার স্বাদ পেতে বাবা-মায়ের হাত ধরে তারা ঘুরে বেড়িয়েছে স্টলে স্টলে।

প্রাণ চিনিগুড়া চাল নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজুরুল ইসলাম চৌধুরী সুইট।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পৃথিবীর আদিমতম ও প্রাচীনতম উৎসব হচ্ছে নবান্ন উৎসব। আমরা সেই উৎসবের নাগরিক সংস্করণ করেছি। এই উৎসবের বড় দিকটা হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সুখী-সুন্দর-সমৃদ্ধি ও সাম্যের বাংলাদেশ নির্মাণ করা।”

নবান্ন উৎসব, পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসবের মতো ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো নানাভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

“যত বেশি এ উৎসব হবে, আগামী প্রজন্ম শিশুরা সংস্কৃতিবান্ধব হবে, প্রকৃতিবান্ধব হবে। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে এই উৎসব সহায়ক হবে।”

উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বটি শেষ হয়ে যায় এক ঘণ্টার মধ্যেই। তবে তখনও উৎসবপ্রাঙ্গনে বায়োস্কোপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মো. সুমন।

স্কুল ছুটির পর একদল খুদে শিশু ছেঁকে ধরল তাকে। বায়োস্কোপে চোখ রেখে তারা একনজর দেখে নিলো গোটা বাংলাদেশ।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা এর আগে জানিয়েছেন, কালের বিবর্তনে যে ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, তা এই নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চান তারা।

উৎসবের প্রথম দিনে দ্বিতীয় ভাগেও ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিকালে উৎসব প্রাঙ্গনে একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, অনিমা রায়, শ্যামল পাল, খায়রুল ওয়ার্সি।

দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সুরবিহার। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে গারো কালচারাল একাডেমি। একক আবৃত্তি পরি্বেশন করেন মাসকুর-এ-সাত্তার-কল্লোল ও তামান্না তিথি। এদিন ছিল মানিকগঞ্জের মহুয়ার পালার পরিবেশনা।

দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে একক সংগীত শোনাবেন আবু বকর সিদ্দিক, আরিফ রহমান, আতাউর রহমান, এস এম মেজবাহউদ্দিন, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে স্ব ভূমি লেখক শিল্পীবৃন্দ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আহকাম উল্লাহ, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী।

সেদিন মানজার চৌধুরী সুইটের নির্দেশনায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পারফর্ম করবে নাটিকা ‘ইতিহাস কথা কও’।

উৎসবের শেষ দিন শনিবার সকাল ৯টায় শুরু হবে তৃতীয় দিনের পরিবেশনা।

সেদিন সকালে একক সংগীত শোনাবেন মহাদেব ঘোষ, মামুন জাহিদ খান, সঞ্জয় কবিরাজ, তাহমিনা খন্দকার মুক্তি। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে ঢাকা স্বরকল্পন। পথনাটক ‘বৃত্ত’ পরিবেশন করবে নাট্যদল।

পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় উৎসবের সমাপনী পর্বে গান শোনাবেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, আব্দুল হালিম, তিমির নন্দী, ফকির আলমগীর।

সেদিন মাগুরা থেকে আসা সমীরণ বাউল ও তার দলের বিশেষ পরিবেশনা থাকবে মঞ্চে। দলীয় নৃত্য পরিবেশনা করবে ধানমণ্ডির বুলবুল ললিতকলা একাডেমি।