সড়ক আইন সংশোধনে শাজাহান খানদের দাবিগুলো যাবে মন্ত্রণালয়ে

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, সে সব দাবি মেনে নিয়ে আইনের সংশোধনের সুপারিশ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2019, 08:10 PM
Updated : 23 Nov 2019, 08:16 PM

শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে পরিবহন নেতাদের বৈঠকের পর শাজাহান খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস পেয়েছেন তারা।

“সড়ক পরিবহন আইনের অনেক ছোটখাট বিষয় আছে যেগুলো বিআরটিএ ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা যাবে। আমরা সেটা দাবি করায় উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সেটা বলে দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন আইনের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করতে ৩০ শে জুন পর্যন্ত মাননীয় মন্ত্রী যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটা মেনে নিয়েছি।

“৩০ শে জুনের পর আমরা যদি দেখি যে এইগুলা সঠিকভাবে হচ্ছে না তখন আমরা পরবর্তী কর্মসূচি জানাব।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, শ্রমিক ফেডারেশনের দাবি মেনে নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের কাঠামোর ত্রুটি এবং গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়ে নতুন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আপাতত বিরত থাকবে পুলিশ।

রাত সোয়া ৯ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে শুরু হওয়া এ বৈঠকে শাজাহান খান ছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান ফারুকসহ সারা দেশের অন্তত ৩০ জন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বিআরটিএর চেয়ারম্যান কামরুল আহসান, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম এবং ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বুধবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামে একটি সংগঠন। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও গত রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন হঠাৎ করেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বিভিন্ন জেলার পরিবহন শ্রমিকরা।

এর ফলে অন্তত ১০টি জেলার সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ কার্যত চার দিন বন্ধ থাকে।

এই অচলাবস্থা কাটাতে গত বুধবার রাতে ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক ডাকা হয়। তাতে ধর্মঘট আহ্বানকারী ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১০ নেতার পাশাপাশি বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহও ছিলেন। ওই বৈঠকে মন্ত্রীর দাবি মেনে আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওই ধর্মঘট আহ্বানকারীরা ফেডারেশনের সদস্য নয় জানিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাজাহান খান।

সেই সব দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “পরিবহন শ্রমিকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা আইন  মানলেও সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল।

“আইন আমরা মানি না এ কথা আমরা কখনো বলিনি। জেলের ব্যাপারে আমরা বলিনি যে, জেল কমাতে হবে। আমরা বলেছি, জরিমানার ব্যাপারে। এটা এমনভাবে করা হয়েছে যে একজন চালকের পক্ষে এত বেশি পরিমাণ জরিমানা দেওয়া কঠিন ব্যাপার। সুতরাং ধর্মঘটও ডাকিনি, ধর্মঘট করা আমাদের পেশা নয়। আমরা যখন বিপদগ্রস্ত হই তখন কথা বলি। যখন সরকার কথা না শোনে তখন আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হয়।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “সড়ক পরিবহন সেক্টরের নেতারা আমাদের কাছে এসেছেন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সে সমস্যা আছে তারা যেভাবে চালাচ্ছেন তারা সেভাবেই চালিয়ে যাবেন ৩০ জুন পর্যন্ত।

“আইনের সবগুলো ধারা কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে গিয়েছে। ৯টি ধারার আংশিক বিষয়ে তারা আমাদের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন। আমি মনে করি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস এবং পার্কিংয়ের ব্যাপারে তাদের আপত্তি যৌক্তিক। এজন্য এই জায়গায় ৩০ জুন পর্যন্ত আমরা অ্যাকশনে যাব না। পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এইগুলোর ব্যাপারে যেন তারা সতর্কতার সাথে দেখেন।”

আইন সংশোধন নিয়ে তিনি বলেন, “আইনের ধারা পাল্টাতে হলে পার্লামেন্টে যেতে হবে। আমরা শ্রমিক নেতাদের আপত্তিগুলো জেনেছি। তাদের কিছু বিষয় প্রস্তাব আকারে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”