মন্ত্রীর আশ্বাসে সড়কে ধর্মঘট প্রত্যাহার

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 04:18 PM
Updated : 20 Nov 2019, 09:28 PM

ঢাকার ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে বুধবার রাতে প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে ‘সমঝোতা’ হওয়ার পর এই ঘোষণা আসে।

মধ্যরাতে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যে নয়টি দাবি তুলেছেন, তা বিবেচনা করবেন তারা।

ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট শুরু করলেও বাস শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন। তবে দাবি একই রকম হওয়ায় বাস শ্রমিকরাও কাজে ফিরবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়কে অচলাবস্থা নিরসনে এই বৈঠকে উপস্থিত না হলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, নতুন আইনের কিছু বিষয় নিয়ে ফেডারেশনের নেতারা বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসবেন।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বুধবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় ট্রাক ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

এদিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও দুদিন ধরে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখছিলেন চালকরা, যাতে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

এই অচলাবস্থা কাটাতে বুধবার রাতে ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক ডাকা হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারী ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১০ নেতার পাশাপাশি বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহও ছিলেন।

রাত ৯টায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম,  বিআরটিএ কর্মকর্তারাও ছিলেন।

প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে রাত ১টার পর মন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে এসে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন চালকরা যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছেন, আগামী সাত মাস তারা সেভাবেই গাড়ি চালাতে পারবেন।

অর্থাৎ হালকা যান চলাচলের লাইসেন্স নিয়ে যারা ভারী যান চালাচ্ছেন, তারা লাইসেন্স হালনাগাদ করতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পরিবহন শ্রমিক-মালিক এরা উভয়ই এই আইনের সংশোধন করার জন্য আমাদের কাছে বলেছেন। কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক এবং আন্তঃজেলা বাস শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তাদের ৯ দফা ছাড়াও আরও কিছু দাবি ছিল। যে দাবিগুলো সংগত মনে করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কথা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিনের একটা অসঙ্গতি ছিল। তাছাড়া আমরাও তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সগুলো সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দিতে পারছিলাম না।

“সে জন্য যেভাবে তারা এখন গাড়ি চালাচ্ছেন, সেই লাইসেন্স আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে এই সময়ের মধ্যে তারা সঠিক লাইসেন্সটি বিআরটিএ’র মাধ্যমে গ্রহণ করবেন। এই ব্যাপারে আমরা এক মত হয়েছি।”

বিভিন্ন প্রকার গাড়ির ফিটনেস, কাগজপত্র হালনাগাদ সময় মতো করতে না পারায় যে জরিমানা হয়েছে, তা মওকুফের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এসব ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রী মেনে নেবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। গাড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্ত নিয়েও কথা হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারেও ৩০ জুনের মধ্যে বিআরটিএর চেয়াম্যানের সাথে কথা বলে সমাধান করা হবে।”

নতুন আইনের যেসব ধারায় আপত্তি রয়েছে, সে সব বিষয় সুপারিশসহ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে আসাদুজ্জামান কামাল জানান।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

বাংলাদেশ ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, “আমাদের সমস্যাগুলো শুনে দাবিগুলো নীতিগতভাবে তারা মেনে নিয়েছেন।”

ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “এখন কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় চলে না। তবে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নাই। সেগুলো বসে আছে। জরিমানার অঙ্ক বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই হালনাগাদ করতে পারেনি। আমরা জরিমানা মওকুফের দাবি করেছি।”

ট্রাক ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি মো. মনির জানান, ধর্মঘটের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু কোনো আালোচনা না করেই সাধারণ শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকে বসে।

মন্ত্রী জানান, নতুন আইনের ১৬টি ধারার মধ্যে ৯টি ধারায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

নতুন আইন বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধাতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি মন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ করে দিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন হাইওয়েতে ট্রাক বে করে দিতে, চালকদের জন্য বিশ্রামের জায়গা করে দিতে। সেগুলো না হওয়ার বিষয়টি তারা তুলে ধরেছেন। এসব অসঙ্গতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর কাছে সুপারিশসহ পাঠানো হবে।”

এদিকে বাস মালিকরা বলে আসছিলেন, আইন নিয়ে ভীতি এবং আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়ায় বাস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

শাজহান খান এর আগে বলেছিলেন, কী কী ‍বিষয়ে পরিবর্তন ও সংশোধন করা দরকার, সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। আইনের পরিবর্তন সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত আসবে তার আলোকে সরকারকে একটি ‘ডিমান্ড’ দেওয়া হবে।”

এদিকে কর্মবিরতির নামে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে ব্যাপকভাবে যাত্রী ভোগান্তি হওয়ায় এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “একটি চিহ্নিত কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পরিবহন সেক্টরে প্রভাব বিস্তার করে নানা সময়ে সরকারের ভালো কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।

 “এই গোষ্ঠী জনগণের প্রত্যাশিত নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। তারা নিরীহ শ্রমিকদের মাঝে গুজব রটিয়ে ফায়দা নিতে চায়। এই মহলটি পরিবহন সেক্টরে চাদাঁবাজি, ধান্ধাবাজি, নৈরাজ্য জিইয়ে রেখে দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বার্থ হাসিল করে আসছিল। নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন হলে তাদের এহেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় তারা আবার নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।”