নম্বরে ‘পক্ষপাত’: মিল্টন বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বক্তব্য

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের একটি পরীক্ষা বাতিল নিয়ে সংবাদ প্রকাশের সময় কথা বলতে রাজি না হলেও তা প্রকাশিত হওয়ার পর নিজের বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগের মুখে থাকা শিক্ষক মিল্টন বিশ্বাস।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 12:36 PM
Updated : 19 Nov 2019, 12:36 PM

মঙ্গলবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘নম্বরে ‘পক্ষপাত’, জগন্নাথে বাংলা বিভাগে ফলাফল বাতিল’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিকালে ই মেইলে ‘প্রতিবাদ’ পাঠান তিনি।

এই অধ্যাপক দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আনা পক্ষপাতের অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং এর পেছনে তার বিভাগেরই কয়েকজন শিক্ষক জড়িত।

বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের একটি কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে তা পুনর্মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে পাঠায় কর্তৃপক্ষ।

ওই তথ্যটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকীয় নীতি অনুসারে এ বিষয়ে মিল্টন বিশ্বাসের বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তিনি এনিয়ে ‘নিউজ করার কিছু নেই’ মন্তব্য করে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। পরে ফোনে বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সংবাদ প্রকাশের পর পাঠানো ইমেইলে এই শিক্ষক বলেছেন, “স্নাতকোত্তর পর্বের ৫১০১ কোর্সটির খাতা সম্পর্কে নয়, বাংলা বিভাগের ৩০তম একাডেমিক কমিটির সভার মূল বিষয় ছিল অধ্যাপক চঞ্চল বোস উত্থাপিত ‘উড়ো চিঠি’র অভিযোগ। অভিযোগ আকারে উপাচার্যের কাছে প্রেরিত একাডেমিক কমিটির কার্যবিবরণী সম্পর্কে বিডিনিউজ২৪ সংবাদদাতা তথ্য গোপন করেছেন।

অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস

“বরং সেখানে লেখা আছে ৯ম ব্যাচের মিডটার্মের নম্বরের কথা, শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-১৮। অথচ আমি ক্লাস নিয়েছি ১০ম ব্যাচের, খাতাও মূল্যায়ন করেছি তাদের। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনায় আইনের আশ্রয় গ্রহণ করি এবং মিডটার্মের নম্বর দেওয়া খাতা নিয়ে আমি চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় উপাচার্য পুনর্মূল্যায়নে রাজি হন। আমি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্যই উক্ত ব্যবস্থা মেনে নিয়েছি।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনের মূল বিষয় ছিল পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে তা পুনর্মূল্যায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে পাঠানো। এক্ষেত্রে তা হয়েছিল এবং সেটা মিল্টন বিশ্বাসের বক্তব্যেই স্পষ্ট। অভিযোগও যে তার বিরুদ্ধে ছিল, সেটাও তার বক্তব্যে স্পষ্ট; যদিও তাকে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ বলছেন তিনি। আর একাডেমিক কমিটির সভায় আলোচ্যসূচি কী ছিল, সেটা এই সংবাদ প্রতিবেদনে মূল আলোচ্য না হওয়ায় গোপন করার অভিযোগও হাস্যকর।

মেধার ভিত্তিতেই তিনি শিক্ষার্থীদের নম্বর দিয়েছেন দাবি করে মিল্টন বিশ্বাস বলেছেন, “অধ্যাপক হোসনে আরা জলি, অধ্যাপক পারভীন আক্তার জেমী, ফজলে এলাহী অভি শিক্ষার্থীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।”

অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন তার বিভাগের ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জন। তারা সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। শিক্ষার্থীরাও নেমেছিলেন আন্দোলনে।

অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী স্নিগ্ধ স্মরণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যাররা যদি উনার (মিল্টন) চেয়ারম্যানশিপ আটকানোর জন্য আমাদের উস্কে দিত, তাহলে তো তারা আমাদের পরীক্ষা বর্জনে উৎসাহ দিত; পরীক্ষা বর্জনে বাধা দিত না।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্তি পাওয়ার বিষয়ে মিল্টন বলেন, “বিষয়টি সেখানেই নিষ্পত্তি হয় এবং সেখানে আমি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থেকে তারপর জগন্নাথ বিশবিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে নিয়োগ পাই সহযোগী অধ্যাপক পদেই।”

২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি মিল্টন বিশ্বাস অস্বীকার করেননি। তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তার ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের উপরের অংশ খুলে ‍নিজের লেখা খাতার উপরে বসিয়ে দিয়েছিলেন।

এই অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪২তম সিন্ডিকেট সভায় মিল্টন বিশ্বাসকে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছিল। ১০ বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কাজ থেকে তাকে বিরত রাখা এবং পরবর্তী তিন বছর পদোন্নতির আবেদন বিবেচনা না করার সিদ্ধান্তও তখন দিয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথের স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক চঞ্চল কুমার বোস একাডেমিক কাজে অসহযোগিতা, নম্বর হারিয়ে ফেলে, পরীক্ষা কমিটির কাজে কোনো মনোযোগ না দেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মিল্টন বিশ্বাস।

তিনি বলেছেন, “অভিযোগগুলো হাস্যকর। কারণ প্রতিটি কোর্সে আমি নিয়মিত প্রশ্ন জমা দিয়ে খাতা দেখে নম্বর দিয়েছি। কোনো কাজে অবহেলা করিনি। অবহেলা করলে বাংলা বিভাগে সেশনজট লেগে থাকত।”

মিল্টন বিশ্বাস দাবি করেছেন, তার বিভাগের একদল শিক্ষকরা ‘দলবাজি’ করে তাকে ‘হেয় প্রতিপন্ন’ করতে চাইছেন।

বাংলা বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আরজুমন্দ আরা বানুর কথাও ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্নিগ্ধ স্মরণের অভিযোগের জবাবে মিল্টন বিশ্বাস বলেছেন, “কোনো নিয়মিত এবং চাকরিজীবী কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। মিডটার্মে অফিস থেকে সরবরাহকৃত ধারাবাহিক শিটে যাদের রোল থাকে, তারা পরীক্ষা দিলে তাদের নম্বর যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক, না হলে সেটা অফিসের গাফিলতি।”

সাবেক শিক্ষার্থী হাবিব আহসানের প্রসঙ্গ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মিল্টন বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, “কারণ পরীক্ষার খাতা দেখার কাজের সঙ্গে সে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।”

হাবিব আহসানের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছিলেন। ফলে প্রাসঙ্গিকভাবেই তার নামটি এসেছে। সাবেক এই ছাত্র প্রায়ই মিল্টন বিশ্বাসের কক্ষে থাকেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান। অধ্যাপক মিল্টনের বক্তব্য নিতে গেলে সেখানে হাবিবকে পেয়েছিলেন প্রতিবেদক। তখন অধ্যাপক মিল্টনের পক্ষে তিনি বলেছিলেন, মিল্টন বিশ্বাস ‘নিজেই খাতা দেখেন’।

লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিতু কুন্ডুর অভিযোগের জবাবে মিল্টন বিশ্বাস বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুরগামী শিক্ষকদের বাসে নারী শিক্ষিকদের সঙ্গে আমি কখনও ‘অশোভন আচরণ’ করিনি।”

রিতু কুণ্ডুকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না বলেও দাবি করেছেন মিল্টন। তবে তার ‘মিথ্যাচারিতার’ প্রতিবাদ করে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন বলে জানান মিল্টন।