চিকিৎসা ও আইনি পরামর্শ নিতে ঢাকায় মিন্নি

চিকিৎসা ও আইনি পরামর্শ নিতে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 11:23 AM
Updated : 22 Sept 2019, 11:23 AM

শনিবার বরগুনা থেকে রওয়ানা হয়ে রোববার ভোরে তিনি ঢাকা সদরঘাটে পৌঁছান। সেখান থেকে এক আত্মীয়ের বাসায় যান।

পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে যান।

খবর পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমি উদ্দিনও সেখানে যান। সেখানেই তারা আইনি পরামর্শ দেন মিন্নি ও তার বাবাকে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও আইনজীবী জেড আই খান পান্না পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য হল সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্যারের সাথে দেখা করা এবং তার আইনি পরামর্শ নেওয়া।

“তাছাড়া মিন্নি অসুস্থ। পুলিশ রিমাণ্ডের নামে তাকে যে নির্যাতন করেছে। আজকে মিন্নি তারই ভয়াবহতায় ভুগতেছে। ওর হাঁটুতে, বুকে ব্যথা। আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নেব।ওর  চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন।”

মিন্নির বাবা বলেন, “জেলখানায় যে পেইন কিলার দিয়েছিল, ওইটা খাওয়ার পর ওর আরও ক্ষতি হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই সেটা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন ঢাকায় ডাক্তার দেখাব।”

কি ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওকে ব্যাপক মারধর করেছে। শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। মানসিক নির্যাতন করেছে। পুলিশ লাইনসে ধরে নেওয়ার পর যতক্ষণ ছিল, আমার মেয়েকে বসতে দেয়নি, দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

“এরপর রিমান্ডের আগে যে দেড়-দুইদিন রেখেছে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল দুই-তিনবার। বর্বর অত্যাচার করেছে। তারপর মাথায় পিস্তল ধরেছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাইছে। ওর চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন, এজন্যই ঢাকায় আসা।”

মিন্নির বাবা বলেন, “পুলিশ যেসব নির্যাতন করেছে সে জন্যে এখন রতে ঘুমাইতে পারে না। কতক্ষণ পরপর চিৎকার দিয়ে ওঠে। ওর কারণে আমরা কেউ ভাল নাই। ঠিক মত খাওয়া-ঘুমও নাই। স্বাভাবিকভাবে কথাও বলে না। দিন দিন বিমর্ষ হয়ে যচ্ছে। দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওরও (মিন্নির) ইচ্ছা ছিল, আমারও ইচ্ছা ছিল দেখা করার। আমরাতো কেউ কাউকে চিনি না। একটা প্রেক্ষাপটে আমরা পরস্পরকে চিনতে পেরেছি। সে আমার কন্যতুল্য। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি আমার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছি। এখন ও দেখা করতে এসেছে।

“তাছাড়া দুইটা বিষয় আছে। এক, মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে এখন কী করবে না করবে তার পরামর্শ নিতে এসেছে। তাছাড়া আমার কৌতুহল ছিল সেখানে (আদালতে) কি দিয়েছে না দিয়েছে সেগুলো দেখার। তাই এখন পর্যন্ত আদালতে যেসব দাখিল করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে এসেছে।”

“দুই, ও শারীরিকভাবে অসুস্থ, চিকিৎসার প্রয়োজন। কোনো কিছুই তো তার (মিন্নির) জীবনের বিনিময়ে হতে পারে না। আগে তার সুস্থ থাকতে হবে। এর সাথে তার আত্মসম্মান। তবে প্রথমত তার সুস্থ্যতা ও জীবন, পরে অন্যকিছু।”

গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার সময় তাকে বাঁচাতে তার স্ত্রী মিন্নির মরিয়া চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের করা মামলায় মিন্নি ছিলেন প্রধান সাক্ষী।

কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর ১৬ জুলাই মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিফাত হত্যা পরিকল্পনায় তার স্ত্রীও জড়িত ছিলেন।

বরগুনার হাকিম ও জজ আদালতে ব্যর্থ হয়ে মিন্নির আইনজীবীরা তার জামিনের জন্য হাই কোর্টে যান। হাই কোর্ট মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করলে পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

এরইমধ্যে মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তা আমলে নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন তিনি।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, “পুলিশ ও প্রভাবশালী মহল যেটা করতেছে, ওকে চরিত্রহীন করে উপস্থাপন করতেছে, অত্যন্ত খারাপ! আজকে হোক, কালকে হোক আমি এটা দেখে নেব আইনগতভাবে। কোন দুঃসাহসে এটা করতেছে! এটা তাদের মাথায় থাকা উচিৎ কেউ আইনের বাইরে না। আইন প্রয়োগকারী হয়ে তারা বেআইনি কাজ করবে, সেই দেশ আমরা সৃষ্টি করি নাই।”

এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেড আই খান পান্না বলেন, “হত্যাকারীদের, দোষীদের শাস্তি থেকে আড়াল করার জন্যই জামিনের পরদিনই অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এখনও চার আসামি পলাতক। তাদের ধরার জন্য কোনো আগ্রহ নাই, খালি মিন্নি, মিন্নি, মিন্নি। চার্জশিটের কথাতো আগেই বলেছি, আগাগোড়াই এটা একটা মনগড়া উপন্যাস। জজ মিয়া এবং জাহালমের আরেকটা সংস্করণ।”

আদালতে মিন্নির দেওয়া জবানবন্দি ফাঁস হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, “এটাতো পুলিশের কাছে ছিল। সেখানটা বাদে তো আর বাইরে আসতে পারে না। আমরা দেখেছি এটা গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেয়ার আগে এটা প্রকাশিত হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। এটা আদালত অবমাননা।”

মিন্নির ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী পান্না বলেন, “আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।”