রিফাত হত্যার অভিযোগপত্রে মিন্নিসহ ২৪ জন আসামি

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2019, 01:00 PM
Updated : 16 Sept 2019, 03:12 PM

এ মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে রিফাত ফরাজীকে, যিনি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে।

আর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে করা হয়েছে ৭ নম্বর আসামি, যার নাম এ মামলার এজাহারে ছিল এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির রোববার বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মামলার এজাহারের ১ নম্বর আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তার নাম অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় রাখা হয়নি। অভিযোগপত্রের ২৪ আসামির মধ্যে নয়জন পলাতক, বাকি ১৫ জন কারাগারে রয়েছে।”

নিহত রিফাত শরীফ

বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এম এ হান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের ওই প্রতিবেদন তিনি হাতে পান বিকাল সাড়ে ৪টায়। বিচারক ততক্ষণে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ায় প্রতিবেদনটি তার কাছে দাখিল করা যায়নি।

সোমবার সকালে আদালত বসলে প্রতিবেদনটি বিচারকের কাছে দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।

বরগুনার পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ মামলার আসামিদের মধ্যে বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/২১২/১০৯/১১৪/১২০-বি(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাদীর আইনজীবী মুজিবুল হক কিসলু সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ দুই খণ্ডে এই অভিযোগপত্র দিয়েছে। এক খণ্ডে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য খণ্ডে আসামি ১৪ জন, তাদের সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক। 

“১৪ জন নাবালক হওয়ায় তাদের বিচার হবে শিশু আদালতে। অন্যদের নিয়মিত আদালতে বিচার হবে।”

এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক দশ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।

১ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীর ভাই রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীর বয়স ১৭ বছর দেখিয়ে তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির তালিকায় রেখেছে পুলিশ।  

গত ২৬ জুন জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার মধ্যে ২ জুলাই এ হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেন।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়।

কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। এরপর ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সেদিন রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। কিন্তু মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী সেদিন আদালতে দাঁড়াননি, যা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।

পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তরুণী হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।”

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে।

জামিনের ওই রায় স্থগিতের জন্য ইতোমধ্যে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।