মিন্নির জামিন স্থগিতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যে আবেদন করেছিল, তা শুনে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত সোমবার ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে।
আর এর ফলে কলেজছাত্রী মিন্নির জামিন বহাল থাকছে এবং তার মুক্তিতে কোনো বাধা থাকছে না বলে তার আইনজীবী জেডআই খান পান্না জানিয়েছেন।
পান্না ছাড়াও চেম্বার আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল ও মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে উপস্থিত থাকলেও শুনানি করেননি।
কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিফাত হত্যা পরিকল্পনায় তার স্ত্রীও জড়িত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির রোববার বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ২৪ জনকে আসামি করে যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, সেখানে মিন্নির নাম রাখা হয়েছে আসামির তালিকার ৭ নম্বরে।
বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। কিন্তু মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী সেদিন আদালতে দাঁড়াননি, যা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তরুণী হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।
হাকিম ও জজ আদালত মিন্নির জামিন আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় হাই কোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
প্রথম রুল জারি করে তার ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নিকে স্থায়ী জামিন (দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত) দেওয়া হয়।
ওই জামিন স্থগিত চেয়েই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু চেম্বার আদালত ‘নো’ অর্ডার দেওয়ায় হাই কোর্টের রায়ই বহাল থাকল।
রাষ্ট্রপক্ষ এখন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে পারবে। তবে সেজন্য তাদের হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সেখানে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে রিফাত ফরাজীকে, যিনি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে।
আর মামলার এজাহারের ১ নম্বর আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
অভিযোগপত্রের ২৪ আসামির মধ্যে নয়জন পলাতক, বাকি ১৫ জন কারাগারে রয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী মুজিবুল হক কিসলু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশ দুই খণ্ডে এই অভিযোগপত্র দিয়েছে। এক খণ্ডে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য খণ্ডে আসামি ১৪ জন, তাদের সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক।
প্রাপ্তবয়স্ক দশ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।
১ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীর ভাই রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীর বয়স ১৭ বছর দেখিয়ে তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির তালিকায় রেখেছে পুলিশ।
মুজিবুল হক কিসলু বলেছেন, অভিযোগ গঠন হলে এই ১৪ ‘নাবালকের’ বিচার হবে শিশু আদালতে। অন্যদের নিয়মিত আদালতে বিচার হবে।