সুন্দরবনের পরিবেশ সমীক্ষায় বিধিমালা সংশোধন চায় সংসদীয় কমিটি

সুন্দরবনের আশপাশে গড়ে ওঠা কারখানার কারণে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে তা যাচাই করতে বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2019, 03:13 PM
Updated : 14 Sept 2019, 03:13 PM

‘যৌথ পরিবেশগত সমীক্ষা’কে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে এ সুপারিশ করা হয়।

শনিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “সুন্দরবনে আমরা এই অ্যাসেসমেন্ট করতে চাই। বর্তমান আইনে এটা কাভার করে না। আইন পাল্টানো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পরিবেশ আইনের অধীনে যেসব বিধিমাল আছে সেখানে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। ২-৩ মাসের মধ্যে এটা করা সম্ভব হবে। বিধিমালা হয়ে সবক্ষেত্রে এটি চালু হয়ে যাবে।”

বর্তমানে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যখন পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে তখন ওই শিল্প প্রতিষ্ঠান কি পরিমান দূষণ করে সেটা বিবেচনা করা হয়। কমিটি প্রস্তাব করেছে, একটি এলাকায় সবগুলো শিল্প কারখানার যৌথ পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে ছাড়পত্র দিতে হবে।  

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাবের বলেন, “একটা ইটের ভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র পেল। কিন্তু যখন দশটা ইটভাটা থাকবে তখন পরিবেশের ওপর প্রভাব ভিন্ন পড়বে।  সুন্দরবনে কয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠান কালেক্টভিলি হতে পারে। আলাদাভাবে এক একটা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেতে পারে। সবগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান ধরলে এর পরিবেশগত প্রভাব কী হবে? ধরলাম এখন ১০০টার ওপরে শিল্প আছে। সবগুলো নিয়ে একটা ইমপ্যাক্ট হয়। সেটা দেখতে কালেক্টিভ এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করার কথা বলছি।

“এলাকা বিশেষে একসঙ্গে কয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে তার একটা মান ঠিক করা হবে।”

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ব্যাপক সংখ্যায় শিল্প কারখানা নির্মাণের কারণে সুন্দরবন ‘মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে’- এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ‘বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)।  

যদিও গত জুলাই মাসে আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায় সুন্দরবনকে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত হয়।

আইইউসিএন বলেছিল, সুন্দরবনের উজানে ১৫০টির বেশি শিল্প প্রকল্প চালু আছে, যেগুলোর সঙ্গে নৌ ও খনন কার্যক্রম পানি ও প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যের প্রতি বাড়তি হুমকি সৃষ্টি করছে।

রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালকে ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি।

দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ ৪১ মাস এবং দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ ৪৭ মাসের মধ্যে শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে পরিবেশবাদীদের একটি অংশ শুরু থেকেই রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের যাতে ক্ষতি না হয়, তার সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।

এই অবস্থার মধ্যেই সুন্দরবনে পরিবেশগত সমীক্ষা করার বিষয়ে সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ আসলো।