বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে নীতিমালা বদল চান জাপানি বিশেষজ্ঞ

বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা থাকলেও এখানকার অদক্ষ শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন পূর্ব এশিয়ার দেশটির বিশেষজ্ঞরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2019, 12:12 PM
Updated : 10 Sept 2019, 12:12 PM

বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিকদের জাপানে অভিবাসন এবং সেখানে কর্মসংস্থান সহজ করতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে পূর্ব এশিয়ার দেশটির নীতিমালা বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জনসংখ্যা ক্রমাগত সঙ্কুচিত হতে থাকায় থাকা জাপান প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যে দেশগুলো থেকে জাপান কর্মী নেবে সম্প্রতি সেই তালিকায় বাংলাদেশও যোগ হয়েছে। গত ২৭ অগাস্ট টোকিওতে বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে।

আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার কর্মী নিয়োগে গত বছরের ডিসেম্বরে জাপানের পার্লামেন্টে বিল পাস হয়।

প্রাথমিকভাবে আটটি দেশ ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও পূর্ব এশিয়ার অন্য একটি দেশের নাম এই তালিকায় ওঠে।

এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কর্মীদের জন্য দুই ধরনের ভিসা ব্যবস্থা চালু করেছে জাপান।

বিদেশি কর্মী যাদের ন্যূনতম কারিগরি শিক্ষা রয়েছে, তারা ৫ বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবে। এই সময়ের মধ্যে তারা পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিতে পারবে না।

আর যারা দক্ষ (গবেষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী) কর্মী, তারা জাপানে যতদিন খুশি ততদিন থাকতে পারবেন। সেই সাথে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও জাপানে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই দুই ধরনের ভিসা ব্যবস্থাতেই আপত্তি জাপানের মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির (এপিএফএস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইয়োশিনারি কাতসুর।   

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নতুন নীতিমালায় দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যমূলক নিয়ম রাখা হয়েছে। অদক্ষ শ্রমিকরা তিন থেকে পাঁচ বছরের বেশি সেখানে থাকতে পারবে না কিন্তু দক্ষরা লম্বা সময় থাকতে পারবে। আমরা চাই অদক্ষ শ্রমিকরাও লম্বা সময় সেখানে থাকুক।”

অদক্ষ শ্রমিকদের জাপানী ভাষায় ডিপ্লোমা অর্জনকেও দেশটিতে তাদের অভিবাসনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখেন তিনি।

ইয়োশিনারির কথায় সমর্থন দিয়েছেন জাপানের অন্যতম পুরনো রিকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব সোশলজির  ডিন অধ্যাপক মিজুকামি তেতসু। 

এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কলেজ অব সোশলজির স্নাতক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে   এপিএফএসের সহায়তায় বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে কাজ করছে।

২০২০ সালের অলিম্পিক গেমস সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে জাপান সরকারকে সুপারিশ করা হবে বলে গত বছর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল তারা।

রিকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও এপিএফএসের প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সেখানে প্রকল্পের সমন্বয়ক মাসুদ করিম জানান, তারা যেসব সুপারিশ করেছেন, সেসব জাপান সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তাও করেছে।

গত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে যারা জাপানে গেছেন, তাদের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তিও তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

মাসুদ করিম বলেন, “ত্রিশ বছর আগে যারা (জাপানের) সরকারে ছিলেন, তারা সবাই অবসরে গেছেন। নতুন যারা, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের খুব বেশি জানাশোনা নেই। এজন্যই এপিএফএসের বিশেষজ্ঞ এবং রিকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেখানকার নীতি পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

“তারা (বিশেষজ্ঞরা) মূলত অদক্ষ শ্রমিকদের কথাই বলছেন, যারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে জাপানে থাকতে পারবে না।”

তিনি আরও বলেন, “বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভাষা না জানা কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। এটাকে (ভাষার দক্ষতা) অত্যাবশ্যকীয় করা হলে জাপানী ভাষার ওপর ডিপ্লোমা থাকতে হবে, যা অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য খুবই কঠিন হবে। শ্রমিকরা জাপানে কাজ করতে করতেই দেশটির ভাষা শিখে নিতে পারবে বলে মনে করেন তারা।”

জাপানে ২০২৫ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যক জনশক্তি পয়োজন হবে জানান মাসুদ করিম।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে বর্তমানে সাত লাখ ৭৯ হাজার স্বাস্থ্যসেবকের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে শুধু এ বছরই ৬০ হাজার লোক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্মাণ শিল্পেও ২০২৫ সালের মধ্যে জাপানে দুই লাখ ১০ হাজার শ্রমিক দরকার। সেখানে এ বছর তারা নিয়োগ দেবে ৪০ হাজার শ্রমিক। এছাড়া বিভিন্ন ভবনের জন্য ৩৭ হাজার ৫০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীও এ বছর নেবে জাপান। ২০২৫ সালের মধ্যে এ কাজে তাদের শ্রমিক দরকার ৯০ হাজার।