গ্রেপ্তারের পরদিনই তাসভীরের জামিন

নকশা জালিয়াতির এক মামলায় গ্রেপ্তারের এক দিনের মধ্যে  জামিন পেলেন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বনানীর এফআর টাওয়ারের অন্যতম মালিক কাসেম ড্রাইসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসভীর উল ইসলাম।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2019, 12:17 PM
Updated : 19 August 2019, 12:17 PM

সোমবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ আসামি তাসভীরকে জামিন দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন রোববার তাসভীরকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

বিএনপি নেতা তাসভীরের পক্ষে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন।

আসামির আইনজীবী শুনানিতে বলেন, “ভবনটি নির্মাণ করেছিল রূপায়ন গ্রুপ। এর চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। ভবন নির্মাণে যদি ত্রুটি থাকে, তবে তার দায় মুকুলের।”

এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, “মামলার সবগুলো ধারার অভিযোগই এ আসামির বিরুদ্ধে সঠিক। দুর্নীতির দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না। জামিন পেলে তিনি মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাবেন।”

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিনের আদেশ দেন।

এই মামলার আরেক আসামি প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুককে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে দুদক। রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মুকুলও মামলার আসামি।

নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনটিতে কয়েকটি তলা বাড়ানোর অভিযোগে গত ২৫ জুন তাসভীরসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন দুদক কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক।

দুদকের করা এক মামলায় রাজউকের ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফআর টাওয়ারকে ১৯ তলা থেকে বাড়িয়ে ২৩ তলা করা, উপরের ফ্লোরগুলো বন্ধক দেওয়া ও বিক্রি করার অভিযোগে ২০ জনকে আসামি করা হয়।

তাসভীরের কোম্পানি ওই ভবনের ২১, ২২ ও ২৩ তলার মালিক।

এই মামলার আসামির তালিকায় তাসভীর ছাড়াও এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের নাম রয়েছে।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন,সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি, সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী মো. এনামুল হককেও আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।

এছাড়া বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমানও এ মামলার আসামি।

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীরের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিএসপি ফাইনান্স লিমিটেড (বাংলাদেশ) থেকে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে অবৈধভাবে এফআর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩ কিনেন।

দুদকের অন্য মামলাটি করা হয়েছে এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন এবং নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অভিযোগে।

গত ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।

কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ওই ভবনের জমির মূল মালিক প্রকৌশলী ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।

অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এফ আর টাওয়ারের ১৮ তলার নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল বিধি লঙ্ঘন করে। তার ওপরে আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের নকশাকে বৈধতা দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হয়। ত্রুটি ও নিয়মের ব্যত্যয় ছিল ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাসভীর। ওই মামলায় জামিনে আছেন তিনি।