অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প ঠিক করে তা দ্রুত বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 09:55 AM
Updated : 18 August 2019, 10:05 AM

প্রধানমন্ত্রী রোববার তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি মনে করি এই দপ্তর (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) থেকেই.. যেহেতু একটা ভালো সেটআপ আছে। সেখান থেকে কিন্তু একটু নজরদারিও বাড়াতে হবে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে, যে অগ্রাধিকার ঠিক করে নিয়ে কোন কাজগুলি দ্রুত আমরা করতে পারি।”

‘কাগজে-কলমের’ কাজ ও পরিকল্পনা শেষ করে ফেলার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ফিজিক্যাল ওয়ার্ক যেন বন্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু করে দিতে পারি সেভাবে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।”

দারিদ্র্যের হার আরও কমানোর জন্য কাজ করতে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলব প্রত্যেকটা এলাকায় আমাদের খোঁজ নেওয়া দরকার। যেটা আমি ডিসি কনফারেন্সেও বলে দিয়েছি। কোনো এলাকায় কেউ ভিক্ষা করবে না, কোনো এলাকায় মানুষ গৃহহারা থাকবে না। যেখানেই গৃহহারা মানুষ, তার ঘর তৈরি করে দিতে হবে।”

নিষ্ক্রিয় প্রকল্পগুলো আবার চালু করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ঘরে ফেরা কর্মসূচি নিয়েছিলাম। এই প্রোগ্রামটা বোধহয় আবার হাতে নিতে হবে।”

পাশাপাশি এতিমখানা, বয়োবৃদ্ধদের থাকার ব্যবস্থার জন্য ‘শান্তিনিবাস’ ও বিত্তশালী বয়োবৃদ্ধদের জন্য ‘অবসর’ কর্মসূচিও আবার চালু করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

গত অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সবসময় একটু কমই ধরি। কিন্তু অর্জনটা বেশি করতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য আছে যে, আমরা ডাবল ডিজিটে যাব। প্রবৃদ্ধি ৮ পর্যন্ত আমরা উঠে এসেছি। এটা মনে রাখতে হবে আটের পরে ওপরে ওঠানো কিন্তু একটু বেশ কঠিন এবং এটা কিন্তু একটু ধীরগতিসম্পন্ন হয়। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। ধরিগতিসম্পন্ন হবে বলেই আমাদের একটু বেশি নজর দিতে হবে। বেশি শ্রম দিতে হবে। বেশি কাজ করতে হবে।

“এখন কিন্তু অত দ্রুত আমরা উঠতে পারব না। অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই এটা হয়ে থাকে। কিন্তু এর থেকে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। যে দেশ আমাদের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে? একটা বটমলেস বাস্কেট হবে। সেই দেশটা থেকেও যেন আমাদের দারিদ্র্যের হার কমে। এক শতাংশ কম হলেও কমাতে হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

“যে ঘুষ নেবে শুধু সে না, যে দেবে সেও অপরাধী। এই জিনিসটা মাথায় রাখা দরকার এবং এভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এভাবে যদি আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি, এটা নিয়ন্ত্রণ করি, তাহলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারব। এক্ষেত্রে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন যথেষ্ট সক্রিয় আছে।”

এর সঙ্গে কে কত কর দিল আর কে কত খরচ করল তারও একটা হিসাব নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার প্রেক্ষাপটে মশাবাহিত রোগটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সবই করা হচ্ছে মন্তব্য করে এই রোগ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ডেঙ্গু একটা বিরাট সমস্যা। এবার শুধু আমাদের দেশে নয়, আমাদের আশপাশে অনেক দেশেই কিন্তু এটা ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো দেশে তো মহামারি আকারে দেখা গিয়েছে। ইমার্জেন্সি ডিক্লিয়ার করতে বাধ্য হয়েছে।

ডেঙ্গুর বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তার যে নির্দেশগুলো দিয়েছে..প্রচুর পরিমানে পানি পান করা বা পানীয় জাতীয় খাবার যত নেওয়া যায় সেগুলো নেওয়া। একটু সচেতন থাকা, মশারি ব্যবহার করা।

“এছাড়া এটা মোকাবেলার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো করা হচ্ছে। নিজেদেরকে সচেতন থাকতে হবে। নিজের ঘর বাড়ি পরিষ্কার রাখা, কোথাও ডেঙ্গুর মশাটা যেন জন্ম না নিতে পারে সে সচেতনতা সৃষ্টি করা, নিজে সচেতন থাকা এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সেটা হচ্ছে সব থেকে প্রয়োজন।”

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, মশিউর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।