ঈদের ছুটির মধ্যে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছে, ১৪ অগাস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক এই নিয়োগ কার্যকর হবে।
অবসরের বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পরও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে চাকরিতে রেখে দেওয়া নতুন কিছু নয়। এ ধরনের চুক্তির মেয়াদ সাধারণত ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছরও হয়।
কিন্তু সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ বাড়ানোর আদেশটি হয়েছে মাত্র এক মাসের জন্য, যা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
বত্রিশ বছরের কর্মজীবনের সাড়ে চার বছর আছাদুজ্জামান মিয়া ঢাকার পুলিশ কমিশনারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য প্রশংসিত হয়েছে।
পাশাপাশি অপরাধীদের ওপর নজরদারি সহজ করতে ঢাকার ৭২ লাখ ভাড়াটিয়ার ডেটাবেজ তৈরির মত স্পর্শকাতর কাজটিও তার সময়েই হয়েছে।
তাকে কেন মাত্র এক মাসের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হল?
পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন চলছে শোকের মাস। এই অগাস্ট মাসে দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে অতীতে। ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। ১৭ অগাস্ট দেশজুড়ে বোমা হামলা হয়েছে। ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে।
“নিরাপত্তার বিচারে এই মাসটা খুব স্পর্শকাতর। ওই দিনগুলোকে কেন্দ্র করে জঙ্গি সংগঠন বা স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই মাসকে ঘিরে প্রতিবছরই আমাদের ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিতে হয়।”
ওই কর্মকর্তা বলেন, “এই সময় নতুন কোনো কমিশনার দায়িত্ব নিলে, তার মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে, তার পক্ষে খুব দ্রুত সব বুঝে সামলে নেওয়া কঠিন হতে পারে। আছাদুজ্জামান মিয়া লম্বা সময় ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব দিক চিন্তা করেই হয়ত সরকার মনে করেছে যে এ সময়টায় ওই পদে নাড়াচাড়া না করা ভালো হবে।”
ওই কর্মকর্তা আভাস দেন, আছাদুজ্জামান মিয়াকে শিগগিরই নতুন কোনো দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আর সে কারণেও আপাতত দীর্ঘ চুক্তিতে না গিয়ে মাত্র এক মাসের জন্য তাকে পুরনো পদে রাখা হতে পারে।
১৯৬০ সালের ১৪ অগাস্ট ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জন্ম নেওয়া আছাদুজ্জামান ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার হওয়ার আগে সিলেট, সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা ও রেঞ্জে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজিও ছিলেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বের মেয়াদ এক মাস বাড়ার খবরে আছাদুজ্জামান মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার যতদিন ‘প্রয়োজন মনে করেছে’ ততদিনের জন্যই চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
“এটা সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমার এখানে কিছু বলার নেই। আমার যা দায়িত্ব তা আমি বিধি অনুযায়ী পালন করে যাব।”