৩০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা

ভর্তি মৌসুম সামনে রেখে দেশের ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2019, 05:04 PM
Updated : 10 August 2019, 05:04 PM

’ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা’ শিরোনামে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কেউ অনুমোদনহীন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাসে অথবা অননুমোদিত কোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সে ভর্তি হলে তার দায়-দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি নেবে না।”

তবে ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তিকে কার্যকর কিছু ভাবছেন না বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”এভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। ইউজিসিকে সেভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থ হিসাবে প্রমাণ করে এবং খেলো করে ফেলা হয়।

”বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু আবার দেখা যায়- প্রতিবার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়, সার্টিফিকেট দেওয়া হয় এবং কনভোকেশন হয়।”

ইউজিসিকে আইন অনুযায়ী শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফারইস্ট ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের এই চেয়ার‌ম্যান বলেন, “আইনে কোনো ঘাটতি থাকলে সেটার পরিবর্তনও করা যেতে পারে। আর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তাহলে আমরা তাদেরকে এ ব্যাপারে সহায়তা করত পারব।”

এদিকে ইউজিসির এমন বিজ্ঞপ্তিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলছেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউজিসি সাধারণত প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয়। দুটি ভবনে আামাদের ক্লাসের কার্যক্রম চলে আর বাকি দুটিতে লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামসহ সাপোর্টিভ কার্যক্রম চলে। সবগুলো বিষয় ইউজিসি জানে। কেন আমরা এই তালিকায় পড়েছি, তা জানতে চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি আমরা।”

বর্তমানে দেশে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে তার মধ্যে সম্প্রতি অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়টির শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

যাদের যে অবস্থা

অবৈধভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা

ইবাইস ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বোর্ড অব ট্রাস্টি দুই ভাগে বিভক্ত এবং একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। দ্বন্দ্ব নিরসন তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়েও একটি গ্রুপ আদালতে মামলা দায়ের করে উক্ত কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

ইউজিসি বলছে, ধানমণ্ডি ও উত্তরায় দুটি ক্যাম্পাস থাকলেও বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই।

আদালতের রায় নিয়ে পরিচালিত

সরকার বন্ধ করলেও আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা

অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, এনপিআই ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি।

বোর্ড অব ট্রাস্টি নিয়ে দ্বন্দ্ব

পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনালজি।

অননুমোদিত প্রোগ্রাম

ইউজিসির অনুমোদন না নিয়েই সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ’বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং জে এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ’এম এ ইন ইংলিশ’ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে।

অনুমোদন পেলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি

নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেলেও শিক্ষা কার্যক্রম এখনও চালু হয়নি। এর মধ্যে রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদাম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছান বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া রয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি মেলেনি

কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্তাদি পূরণ করতে না পারায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়নি।

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ কোর্স বৈধ নয়

ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রাম ‘অনুমোদিত বা বৈধ’ বলে বিবেচিত হবে না

তালিকায় আছে দারুল ইহসানও

আদালতের আদেশের ফলে বন্ধ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে ইউজিসির তালিকায়। এতে বলা হয়, আদালতের আদেশ বলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইহার সকল আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে।