চির ছুটিতে সমাজকর্মী ঝর্ণাধারা চৌধুরী

গান্ধীবাদী চেতনায় মানুষ আর সমাজের সেবায় পুরো জীবন পার করে চিরবিদায় নিলেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 04:27 AM
Updated : 27 June 2019, 09:49 AM

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব ঝর্ণাধারা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে ট্রাস্টের সভাপতি স্বদেশ রায় জানান।

সমাজ সেবার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া ঝর্ণাধারা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

আশ্রমের পরিচালক রাহা নব কুমার জানান, ঝর্ণাধারা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ জুন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে পরদিন তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বুধবার হাসপাতালেই তার মস্তিস্কে দ্বিতীয়বারের মত রক্তক্ষরণ হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে আর জীবনে ফেরাতে পারেননি। 

ঝর্ণাধারা চৌধুরীর মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। 

ট্রাস্টের সভাপতি স্বদেশ রায় জানান, ঝর্ণাধারার কফিন রাতে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রেখে দুপুরের আগে নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সেখানে ঝর্ণাধারা চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।  

শহীদ মিনার থেকে ঝর্ণাধারার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীরতে, তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল গান্ধী আশ্রমে। সহকর্মীরা সেখানে তাকে শেষ বিদায় জানাবেন।

মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করা এই নারী মরণোত্তর দেহ দান করে গেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যই। তার ইচ্ছা অনুযায়ী সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ সন্ধানীর কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে স্বদেশ রায় জানান।

১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী। তিনি গান্ধীবাদের দিক্ষা পান পরিবার থেকেই। 

বাবা গান্ধীয়ান প্রথম চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সালে ঝর্ণাধারা যোগ দেন গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত অম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাস্টে। সেটাই এখন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট নামে পরিচিত।

১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘে যোগ দেন ঝর্ণাধারা। সমাজকর্মের পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান।

চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় ত্রাণ কাজেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

ঝর্ণাধারা১৯৭৯ সালে ফিরে যান গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে। মহাত্মা গান্ধীর সহচর চারু চৌধুরী ১৯৯০ সালে মারা গেলে ট্রাস্টের সচিবের দায়িত্ব পান ঝর্ণাধারা। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ঝর্ণাধারা চৌধুরী ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন। বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া বেগম রোকেয়া পদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা সম্মাননা পেয়েছেন এই সমাজকর্মী।

সমাজ আর মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা এই নারী নিজের জীবনে আর সংসারী হননি।