ফেনীর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যায় ‘অভিযোগের তীর’ কাউন্সিলরের দিকে

ফেনীর দাগনভূইয়া পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফখরুল উদ্দিন চৌধুরীকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বোন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2019, 10:48 AM
Updated : 24 June 2019, 11:22 AM

সোমবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের বোন শাহিনুর আক্তার অভিযোগ করেন, সাইফুল তাদেরকে নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছেন।

তবে শাহিনুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর এবং ড্রিম লাইন পরিবহনের মালিক সাইফুল ইসলাম। 

গত বছরের ২০ জানুয়ারি দাগনভূইয়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুলের লাশ উপজেলার মাতুভূইয়া বাজার সংলগ্ন একটি জমি থেকে উদ্ধার করা হয়।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহিনুর জানান, ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি তার ভাইকে তাদের ফাজিলপুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মাতুভূইয়া ব্রিজের পাশে জবাই করে দুর্বৃত্তরা।

২০ জানুয়ারি ফখরুলের লাশ উদ্ধারের পর ২২ জানুয়ারি তার আরেক ভাই নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বাদী হয়ে দাগনভূইয়া থানায় একটি মামলা করেন।

মামলায় কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম, তার দুই ভাই পারভেজ ও রাসেল ছাড়াও জাহিদ হাসান পলাশ হীরা, বাহাদুর, শামীম, মুজাহিদ ও এক মাইক্রোবাস চালকসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শাহিনুর বলেন, “সাইফুল ইসলামের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়।”

তিনি জানান, ঘটনার পর পুলিশ ছয়জন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও হীরা বাদে বাকিরা পরে জামিনে বের হয়ে যায়। 

এরপর থেকেই সাইফুল ইসলাম তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে শাহিনুর বলেন, “তার ভয়ে আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারছি না।”

ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের মা রওশন আরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে দাগনভূইয়া পৌরসভার কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ বাহাদুর ও হীরাকে গ্রেপ্তার করে।

“কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বাদীপক্ষ শুধু আমাকেই নয়, আমার ভাই পারভেজ ও রাসেলকেও মামলায় আসামি করেছে।”

ফখরুলের পরিবারের প্রতি পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, “শাহিনুর ও তার ভাই আমার নামে ফেইসবুকে আজেবাজে কথা এবং বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। সেজন্য আমি দাগনভূইয়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছি।”

ফখরুলের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “আমি ব্যবসা করি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র।

“বাদীপক্ষ আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে মামলায় আমাদের তিন ভাইয়ের নাম দিয়েছে এবং মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সমাজে হেয় করছে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। তাদের তদন্তে যা আসবে তা মেনে নেব।”

এদিকে মামলাটির তদন্তে ‘যথেষ্ট’ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলার পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যাদেরকে আসামি করা হয়েছে বা ১৬৪ ধারার বাইরে যে কিছু আসবে না তা নয়। আমাদের তদন্তে যা যা পাওয়া যাবে আমরা তাই উল্লেখ করব।”

এ মামলায় আসামি হীরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ফখরুলের পরিবারকে আসামিপক্ষের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে তিনি তিনি তাদেরকে জিডি করতে কিংবা অথবা তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন।