‘মুক্তিযুদ্ধ পরিপন্থি’ বিষয় এখনও সংবিধানে: বাচ্চু

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর নানা কাটাছেঁড়ার কারণে সংবিধানে এখনও ‘মুক্তিযুদ্ধ পরিপন্থি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়বস্তু’ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 01:29 PM
Updated : 24 March 2019, 03:58 PM

রোববার বিকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে স্বাধীনতা উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর সংবিধানকে আগের ধারায় আনতে সচেষ্ট হয়।

ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র- এই চার মূল নীতি আওয়ামী লীগ ফিরিয়ে আনলেও রাষ্ট্রধর্ম এখনও সংবিধানে বহাল রয়েছে।

বাচ্চু বলেন, “রাষ্ট্র নির্মাণে চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের কথা আমরা বলেছি বাহাত্তরে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সংবিধানকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে যেন কাদা লেপে দেওয়া হয়েছে। তাতে এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি বিষয়বস্তু রয়ে গেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।”

হেফাজতে ইসলামী, আওয়ামী ওলামা লীগের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো সরকারের ছায়াতলে এসে বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক এই সভাপতি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে মাত্র। আমরা বহু কাল শাসিত হয়ে এসেছি। এখন স্বশাসিত হওয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে কেবল। রাষ্ট্র নির্মাণ এখনও যোজন যোজন দূর। তাই মানবতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “স্বাধীনতার চেতনা বিস্তারে মুখে মুখে ‘সংস্কৃতিবান্ধব সরকার’ এর কথা বললেই হবে না। কোনো অনুদান নয়, মূল বাজেটের কমপক্ষে এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ করতে হবে।”

‘অশুভের সাথে আপসহীন দ্বন্দ্ব চাই’ প্রতিপাদ্যে উদযাপিত হচ্ছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, “মাদক ও সন্ত্রাসের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো আপস চলবে না। যদি এই অশুভ শ্বাপদের সঙ্গে আপস হয়েই থাকে, তবে সংস্কৃতিকর্মীরা যে সুবাতাস ছড়াচ্ছেন সমাজে তা শতভাগ সফল হবে না।”

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবর্ষ উদযাপনের আগেই সারা দেশের সব কটি উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আগের আমলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে এ উদ্যোগ চালু হওয়ার কথা থাকলেও শিল্পকলা একাডেমির গড়িমসির সমালোচনা করেন হাসান আরিফ।

তিনি বলেন, “যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের আগে তা বাস্তবায়ন করা না যায়, তবে শিল্পকলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী, মান্নান হীরা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বক্তব্য দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যরা।

পরে সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, নৃত্য সংগঠন স্পন্দন । অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন ফকির সিরাজ, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, আরিফ রহমান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বরশ্রুতি। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রূপা চক্রবর্তী, শাহাদাৎ হোসেন নিপু। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। পথনাটক পরিবেশন করেন আরণ্যক নাট্যদল।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছাড়াও রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চেও ছিল এই আয়োজন। সেখানেও ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।

আগামী ২৫ ও ২৬ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রতি দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল ৫টায়।