একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এরশাদের দাখিল করা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বর্তমানের সংসদ সদস্য, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত তিনি। ব্যবসাও রয়েছে তার। অপরদিকে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা তিনি।
নগদ অর্থের পাশাপাশি স্থাবর সম্পত্তিতেও সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে তার স্ত্রী।
এরশাদ বলছেন, গুলশান ও বারিধারায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।
এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার। অপরদিকে স্ত্রীর গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দামই ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর বাইরে বসুন্ধায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকার বেশি দামের দুটি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে।
পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে এরশাদ যে হলফনামা দিয়েছিলেন সেখানে তার উল্লেখ করা নগদ অর্থের পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। তবে এবার সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন মাত্র ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।
বার্ষিক আয়
হলফনামায় এরশাদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানি ও ব্যবসা থেকে তার এই অর্থ আসে। ব্যবসা থেকে তিনি আয় করেন দুই লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা।
বেতন-ভাতাদি পান বছরে ১ কেটি ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানি ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা; সংসদ সদস্যের সম্মানি ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সম্মানি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ নিজ ও স্ত্রীর নামে
এরশাদের হাতে রয়েছে নগদ ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রা নেই কারো।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে এরশাদের ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিন একাউন্টে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৩১ টাকা; ৮ লাখ ৫৮ হাজার ২১ টাকা এবং ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩২ টাকা।
দুই একাউন্টে সোনালী ব্যাংকে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৫ টাকা ও ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৩ টাকা; ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৭ হাজার ৫২৪ টাকা।
শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস ৯ লাখ টাকা।
যানবাহনে রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ।
এরশাদের নিজের কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই। ৩০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩০ হাজার টাকার আসবাব রয়েছে তার।
ব্যবসায় মূলধন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা; জমির বিক্রি করে রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এরশাদের স্ত্রীর হাতে নগদ ২৬ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ২৩৩ টাকা। ব্যাংকে অর্থ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ২২ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৯১ টাকা। জনতা পাবলিশ লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
এফডিআর ২ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা, আরেকটি এফডিআরে রয়েছে ১ কোটি টাকা ও বিনিয়োগ ২৫ লাখ হাজার টাকা, সেভিংস সার্টিফিকেট ৬০ লাখ টাকা, সেভিংস স্কিম ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৭ টাকা।
তিনটি গাড়ি রয়েছে। সেগুলোর দাম যথাক্রমে ৩৩ লাখ টাকা, ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫০ টাকা ও ৭৫ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ১০০ ভরি, যারমূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৭ লাখ টার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৮ লাখ টাকার আসবাব রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ
এরশাদের নামে কোনো কৃষি ও অকৃষি জমি নেই।
৭৭ লাখ টাকা দামের দোকান; বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকা দামের আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টামা দামের রংপুরে এবং ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের জমি রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে।
পূর্বসুত্রে পাওয়া বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্তমূল্য জানা নেই স্ত্রীর।
গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের একটির মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা; আরেকটির দাম ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এরশাদের ঋণ রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এরশাদ। গতবারের মতো এবারও নির্বাচনের আগে ‘অসুস্থতা’ নিয়ে আলোচনায় আছেন ৮৯ বছর বয়সী সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায়ই এমপি নির্বাচিত হন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয় তাকে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, হলফনামায় ৮টি ব্যক্তিগত তথ্য (শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান মামলা, অতীতের মামলার রেকর্ড, পেশা, আয়ের উৎস, সম্পদ বিবরণী, প্রতিশ্রুতি ও ঋণ) দিতে হয়। নবম সংসদ থেকে তা জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা শুরু হয়।
৯ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য ভোটারদের কাছে প্রচারও করবে।
অবশ্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দশম সংসদ নির্বাচনেই হলফনামায় সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে। রংপুর-৩ আসনে জাসদের প্রার্থীর মামলায় পরে আইনি লড়াই না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিবাদী নির্বাচন কমিশন।
হলফনামায় এরশাদের অন্যান্য তথ্য
পেশা- সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
জন্ম- ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০; শিক্ষাগত যোগ্যতা- বিএ (পাশ); বরাবরের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনের নিউ সেনপাড়া ঠিকানা।
>>মামলার বিবরণ
মোট ৩৩টি মামলার বিবরণ দিয়েছেন এরশাদ।
বর্তমানে ছয়টি মামলার দুটি বিচারাধীন এবং চারটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অতীতের ২৭টি মামলার বিবরণীতে জানানো হয়, ১৩টি মামলায় খালাস; অব্যাহতি ৬টি মামলায়; নিষ্পত্তি হয়েছে ৩টি; ফাইনাল রিপোর্ট রয়েছে ৪টি এবং প্রত্যাহার হয়েছে ১টি মামলা।
দশম সংসদ নির্বাচনে এরশাদের ৩৩টি মামলার মধ্যে চারটি বিচারাধীন এবং চারটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। বাকি ২৫টি ছিল খালাস, অব্যাহতি ও নিষ্পত্তি পর্যায়ে।
নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৭টি মামলার মধ্যে বিচারাধীন ছিল ৬টি; স্থগিত ছিল ৩টি; তদন্তাধীন ছিল ৪টি। বাকি ২৪টি খালাস, অব্যাহতি, নিষ্পত্তি ও ফাইনাল রিপোর্টের পর্যায়ে ছিল।
দশম সংসদের ভোটে হলফনামায় এরশাদ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ঢাকা-১৭ আসনসহ তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
সেই হলফনামায় এরশাদের নগদ টাকা মাত্র ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার রয়েছে ৪০ কোটি টাকার মতো। সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানত সাড়ে ৭ কোটি টাকা। বাস ট্রাকের ব্যবসা রয়েছে সোয়া কোটি টাকার। নিজের নামে কৃষি জমি না থাকলেও দালান-অ্যাপার্টমেন্ট দেড় কোটি টাকার মতো।
ফার্স সিকিউরিটির ব্যাংকের কাছে তার দায় পৌনে তিন কোটি টাকা।
এরশাদের শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৯১ লাখ টাকা। চাকরি থেকে বছরে ১৪ লাখ ও ব্যবসা থেকে বছরে মাত্র ৬২ হাজার টাকা তার আয় আসে।
নবম সংসদ নির্বাচনে এরশাদের হলফনামা
এরশাদের বার্ষিক আয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা; ব্যবসায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা; এফডিআর-শেয়ারে আয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এফডিআর সুদ ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
>>অস্থাবর সম্পদ:
নিজের নামে নগদ টাকা ৫ লাখ টাকা; স্ত্রীর নামে ২ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৭৮৬ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কোম্পানি শেয়র নিজের নামে ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা।
নিজের জন্য ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার যানবাহন ও স্ত্রীর ৬১ লাখ টাকা মূল্যের যানবাহন ছিল।
নিজের দেড় লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও স্ত্রীর ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা স্বর্ণালঙ্কা ছিল।
৬ লাখ টাকার আসবার, ব্যবসা মূলধন ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা; স্ত্রীর নাম ৫ লাখ ৭৫ টাকার মূলধন।
>>স্থাবর সম্পদ:
নিজের নামে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের জমি; ১ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার আবাসিক/বানিজ্যিক ভবন।
স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৯ টাকা ও ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক ভবন এবং ৩ কোটি টকা দামের বাড়ি/এপার্টমেন্ট।
ওই সময় গাড়ি বাবদ দায় ১৪ লাখ টাকা; অন্য উৎস থেকে ঋণ ১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার ২১৯ টাকা। একটি কোল্ড স্টোরেজের ঋণ ৪ কোটি ৮৯ লাখ ২ হাজার ৪৯৬ টাকা; যা যৌথভাবে ফার্স সিকিউরিটি ব্যাংকের কাছে ঋণ ছিল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিন হাজারেরও বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ২ ডিসেম্বর বাছাই ও ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে।
ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ২ ডিসেম্বরের পর সব প্রার্থীর হলফনামা ইসির ওয়বেসাইটে প্রকাশ করা হবে।