সব সিদ্ধান্ত আমিই নেব: এরশাদ

জোটে যোগ দেওয়া কিংবা দলের মনোনয়ন, সব সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন জানিয়ে তা মানতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 03:29 PM
Updated : 20 Nov 2018, 03:29 PM

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মহাজোটের হয়ে অংশ নেওয়ার কথা দলটির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জানালেও এরশাদ এখন সিদ্ধান্ত জানাননি। দলের প্রার্থী তালিকাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে ঢাকার গুলশানে ইমানুয়েলস হলে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করে এরশাদ বলেন, “রাজনীতির মেরুকরণে যদি অন্য কোনো জোটের সাথে যেতে হয়। সে ব্যাপারে আমি একক সিদ্ধান্ত নেব। প্রেসিডিয়ামে সেরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের দলে সব সময়ই সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিয়ে থাকেন; তার সিদ্ধান্ত ঘনঘন পরিবর্তনের বিষয়টিও রাজনৈতিক মহলে আলোচিত।

এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা আগে চূড়ান্ত করবেন তিনি। মহাজোটে গেলে সেই তালিকা আবার ‘সমন্বয়’ করা হবে।

তার এ কথার সূত্র ধরে পরে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, “জোটভুক্ত হলে প্রতিটি আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দেব।”

এসময় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ৩০০ আসেই প্রার্থী দেওয়ার দাবি তোলেন। ‘৩০০, ৩০০’ বলে সমস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

তাদের শান্ত করার জন্য এরশাদ বলেন, “আমি যা কিছু করব, তোমাদের স্বার্থে করব, পার্টির স্বার্থে করব। সিদ্ধান্ত আমার উপর ছেড়ে দাও।”

বিএনপি আমলে নিজের জেল খাটার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, ‘মরতে দাও এরশাদকে’।  এরশাদ মরে নাই, বেঁচে আছি আমি। আপনি মরণোন্মুখ। আমরা সৎ পথে ছিলাম, সঠিক পথে ছিলাম। তাই জাতীয় পার্টি বেঁচে আছে।”

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হলেও এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কটি মামলার কার্যক্রম চলছে এখনও।

এই প্রসঙ্গটি তুলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার চেয়ে দুঃখী আর কেউ নাই।”

লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সকলেই আমার সন্তানতুল্য। কাকে রেখে কাকে বাদ দেব। তবে সবাইকে পার্টির স্বার্থে ত্যাগ  স্বীকার করতে হবে। আমি যাকে মনোনয়ন দেব, তাকে গ্রহণ করতে হবে। তার জন্য কাজ করতে হবে।”

রওশন এরশাদও বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার নির্দেশেই কাজ করতে হবে।”

নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশ কজন নেতার অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর আসছে।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা যোগ দিয়েছেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্প ধারায়।

এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গোলাম রেজার আসন সাতক্ষীরা-৪ এ এবার নিজেই ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এরশাদ। পাশাপাশি ঢাকা-১৭ ও রংপুর-৩ আসন থেকেও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

জাতীয় পার্টি গত ১১ নভেম্বর থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে।  এ কার্যক্রম চলে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এ  ক‘দিনে জাপার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ২৮৬৫টি। সেখান থেকে বাছাই করা ৭৮০ জনকে ডাকা হয় মঙ্গলবারের সভায়। পরে তাদের মধ্য থেকে ৩০০ জন প্রার্থীকে আপাতত চূড়ান্ত করবে এরশাদের নেতৃত্বে গঠিত ১৫ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড।

এই বোর্ডে রওশন ছাড়াও রয়েছেন কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতী।

এরশাদ নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বিএনএ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। তারা জাপার প্রার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছেন বলে জানান এরশাদ।

এছাড়া খেলাফত মজলিস নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।