ইডেনছাত্রী মিতা হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত সবাই হাই কোর্টে খালাস

আট বছর আগে ইডেন কলেজের ছাত্রী সাদিয়া নূর মিতা হত্যার ঘটনায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের তিনজনসহ সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 01:26 PM
Updated : 13 Nov 2018, 01:26 PM

ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য অবেদন) ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়।

বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- মিতার ফুফাত ভাই খন্দকার মামুন হাসান, খন্দকার হাসিবুর রহমান ওরফে নিপুণ এবং মফিজ খন্দকার ওরফে দগু।

খালাস পাওয়া যাবজ্জীবন সাজার আসামিরা হলেন- কাজী শাহ আলম ওরফে তুষার কাজী, শামসুর রহমান ওরফে জনি, শেখ নাজমুল ও মিতার চাচাত বোন ইসরাত জাহান শ্রাবণী।

পাঁচ বছর কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হলেন আনোয়ার হোসেন ওরফে মনি।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও ফজলুল হক খান ফরিদ; সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রহমান রাহি।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ খান।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মামলায় কোনো চাক্ষুস সাক্ষি ছিল না। এছাড়া মিতার চাচাত বোন শ্রাবণী যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল, সে জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনসহ সাজা দিয়েছিল।

“স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দুই ধরনের হয়, ইন কালপেটরি (অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে) দেওয়া জবানবন্দি, আরেকটা হচ্ছে এক্স কালপেটরি (নিজেকে অপরাধে না জড়িয়ে) দেওয়া জবানবন্দি। আইনে এক্স কালপেটরি জবানবন্দি আমলযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য না।”

তিনি বলেন, শ্রাবণী যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেটা এক্স কালপেটরি অর্থাৎ অপরাধ সংগঠনে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।

“এখন আমরা শ্রাবণীর বক্তব্যকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বললেও আইন এটাকে শুধুমাত্র স্টেটমেন্ট (জবানবন্দি) বলছে। বিচারিক আদালত শ্রাবণীর জবানবন্দিটাকে ইন কালপেটরি ধরে সাজা দিয়েছিল।

উচ্চ আদালত পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য ও শ্রাবণীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ত্রুটিপূর্ণ বা এক্স কালপেটরি ধরে সব আসামিকে খালাস দিয়েছে।”

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “শ্রাবণী বলেছে, সে কিছুই করেনি। আসামিরা নাকে চেতনানাশক কিছু একাটা ধরার পর তার শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। তাকিয়ে দেখা ছাড়া সে কিছুই করতে পারেনি। এই স্বীকারোক্তিতে শ্রাবণী নিজেকে না জড়িয়ে অন্যদের দোষী বা দায়ী করছেন। ফলে এটা এক্স কালপেটরি স্টেটমেন্ট। আইনের দৃষ্টিতে আমলযোগ্য নয়।”

আইনজীবী মনিরুজ্জামান আরো বলেন, “আমরা আদালতে যুক্তিতর্কে বলেছি, মিতাকে যে হত্যা করা হয়েছে এটা তো সত্য। মানে শ্রাবণীর জবানবন্দি এক্স কালপেটরি হলেও ঘটনার সত্যতা আছে। ফলে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।” 

২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মোতাহার হোসেন তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে যাবজ্জীবন ও এক জনকে ৫ বছরের সাজার রায় দিয়েছিলেন।

পরে আসোমিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য অবেদনের (ডেথ রেফারেন্স) পাশাপাশি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৪ অগাস্ট ঈদ উপলক্ষে কলেজ ছুটির পর মিতা পরিবারের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মিয়াপাড়ায় যান।

মামলায় বলা হয়, আসামিরা ৩০ অগাস্ট রাতে অপহরণের পর মিতাকে হত্যা করে একটি পুকুরে লাশ ফেলে রেখেছিলেন।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শ্রাবণীর মাধ্যমে মিতাকে অপহরণ করে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় মিতার বাবা লিয়াকত হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে ওই দিনই গোপালগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

২০১১ সালের ২৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচলনা করেছিলেন বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এস এম রফিকুল ইসলাম।