দুই কথাসাহিত্যিক পেলেন হুমায়ূন স্মরণে সাহিত্য পদক

নবীন-প্রবীণ কথাসাহিত্যকদের প্রেরণা জোগাতে চতুর্থবারের মতো দেওয়া হল এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2018, 04:51 PM
Updated : 12 Nov 2018, 04:51 PM

সাহিত্যে অবদান রাখায় এ বছর প্রবীণ কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান এবং ‘সাঁঝবেলা’ উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যিক ফাতিমা রুমির হাতে ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়। 

এছাড়াও পুরস্কার পর্বে রিজিয়া রহমানকে দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকার চেক এবং ফাতিমা রুমিকে দেওয়া হয় এক লাখ টাকার চেক। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় দুটি গান  ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ ও  ‘আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’ গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে এই সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন,  “হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জীবনে একটা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাকে ছাড়া আমরা বাংলা সাহিত্যের কথা ভাবতে পারি না। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন পাঠকশ্রেণি তৈরি করে গেছেন, যার ফলাফল আমরা এখনো পাচ্ছি।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন,  “হুমায়ূন আহমেদ একটা কথা বলতেন, কচ্ছপ কোনো কাজে আসে না, কিন্তু তারা ৩০০ বছর বাঁচে। মানুষের কত কাজ, অথচ মানুষ বাঁচে মাত্র ৫০-৬০ বছর। তিনি নিজেকে নিয়ে এসব বলতেন কি না জানি না। আমি উনার অসংখ্য কথার মাঝে এরকম একটা পরাবাস্তব মিল খুঁজে পাই।

“একটা মানুষ হয়ত দৈহিকভাবে বেশিদিন বেঁচে থাকেন না, কিন্তু তার প্রিয় মানুষরা তাকে যতদিন স্মরণ রাখবেন তিনি ততদিনই বেঁচে থাকবেন। তেমনি হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝে শুধু বেঁচেই নেই, তিনি আমাদের মাঝে প্রবলভাবে বেঁচে আছেন।”

হুমায়ূন আহমেদকে সবসময়ই বিরাজমান পান বলে নিজের উপলব্ধির কথা জানান জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।  

“হুমায়ূন আহমেদ নেই, হুমায়ূন আহমেদ আছে। আমরা যারা তার সাহচর্য পেয়েছি তাদের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ জাজ্বল্যমান। যারা তার সহচার্য পাননি তাদের মাঝে তিনি আছেন তার সাহিত্যকর্ম দিয়ে।”

হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে এই সাহিত্য পুরস্কারের উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন,  “আমাদের দেশে সাহিত্য পুরস্কারের সংখ্যা অনেক বেশি৷ কোনো কোনো পুরস্কার অর্থমূল্যে এই পুরস্কারের চেয়ে বেশি। বেশি পুরস্কার দেওয়ার এই সংস্কৃতি ভালো। অনেক প্রতিষ্ঠানই সাহিত্য পুরস্কার দিতে এগিয়ে আসছে। এটা খুবই ভালো একটি বিষয়।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত ফাতিমা রুমির শংসাবচন পাঠ করেন কালি ও কবির সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং রিজিয়া রহমানকে নিয়ে শংসাবচন পাঠ করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

পুরস্কার পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিজিয়া রহমান বলেন,  “আজ আমি বিশেষভাবে সম্মানিত ও  গর্বিত; পাশাপাশি শোকাহত। হুমায়ূন আমার চেয়ে বয়সে ছোট। হুমায়ূনকে স্মৃতিতে রেখে আমাকে এই পুরস্কার নিতে হচ্ছে তাই আমার বিশেষ করে ওর কথা মনে পড়ছে। একজন লেখক কখনো পুরস্কারের জন্য লেখেন না।

“আমি অসুস্থ, আমাকে এমন করে এনে পুরস্কৃত করায় আমি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে, শ্রদ্ধার সঙ্গে এবং ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করলাম।”

বক্তব্যের পর রিজিয়া রহমান তার লেখা নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস বইটি অতিথিদের হাতে তুলে দেন। 

পুরস্কার গ্রহণের পর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তরুণ লেখক ফাতিমা রুমি বলেন,  “এই পুরস্কার আমার মতো নবীন সাহিত্যিকের জন্য কত বড় একটা প্রেরণা তা আমার মতো নবীন লেখকই বুঝতে পারে। আমি হুমায়ূন আহমেদের একজন অন্ধভক্ত। এই পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সমতুল্য।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাক্ষিক অন্যদিনের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম এবং এক্সিম ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। 

এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পাক্ষিক অন্যদিনের উদ্যোগ ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কার।