দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ১৩ শতাংশ মানুষ: গবেষণা

বাংলাদেশে ১৫-৬৫ বছর বয়সী নাগরিকদের ৪৫ শতাংশের হাতে উপযুক্ত ডিভাইস থাকলেও এদের ১৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2018, 04:05 PM
Updated : 3 Oct 2018, 05:39 AM

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতে এই হার ১৯ এবং পাকিস্তানে ১৭ শতাংশ। চীন ও মিয়ানমারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ২৬ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ।

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের প্রাপ্যতা ও ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

২০১৭ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য নিয়ে ‘আফটার অ্যাকসেস: আইসিটি অ্যাকসেস অ্যান্ড ইউজ ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল সাউথ‘ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে প্রকাশ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা ও নীতিনির্ধারণীমূলক শ্রীলংকার প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়া। 

গবেষণায় বাংলাদেশের ৪০টি জেলার ১০০টি ওয়ার্ড এবং গ্রামে দুই হাজার পরিবার ও ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে।

বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকার ১৮টি দেশে এই গবেষণা চালানো হয়।

লার্নএশিয়ার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে বাস করা ১৫-৬৫ বছর বয়সী মানুষ শহরের একই বয়সের মানুষের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

তবে যতগুলো দেশে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে ১৫-৬৫ বছর বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ২৭ শতাংশই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ওই বয়সের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক-চতুর্থাংশেরও কম অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। দক্ষতার অভাবই এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা বলে মনে করছে লার্ন এশিয়া।

অনুষ্ঠানে এশিয়া বিভাগের প্রধান গবেষক ও লার্নএশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিলানি গালপায়া বলেন, “মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং ব্যবহারকারী সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থা হচ্ছে এর ব্যবহারকারী এবং ব্যবহারকারী নন এমন ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা বলা। এই গবেষণায় আমরা সেই কাজটিই করেছি।” 

বাংলাদেশে শহর ও গ্রামে মোবাইল ফোনের মালিকানার ব্যবধান (৭ শতাংশ) এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার যে দেশগুলোতে জরিপ চালানো হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম। একে  ‘অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

যদিও যতগুলো দেশে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী-পুরুষের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।  

এখানে ১৫-৬৫ বয়সের পুরুষদের তুলনায় একই বয়সের ৩৪ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে এবং ৬২ শতাংশ কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

লার্নএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান বলেন, “এই গবেষণা প্রতিবেদনটি টেলিকম খাতের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেছে এবং এতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের যে বৈষম্য রয়েছে, সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে।”

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবে গত অগাস্ট পর্যন্ত ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা নয় কোটি ছাড়িয়েছে; এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটিই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনে।

এ প্রসঙ্গে  প্যানেল আলোচনায় বিটিআরসি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন,  “গত ৯০ দিনে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে সেই হিসাবে অপারেটরদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিটিআরসি প্রকাশ করে।”

এ সময় অপারেটর রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, দেশে বর্তমানে ইউনিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৮ শতাংশ।

টেলিকম সেক্টরে অতিরিক্ত লাইসেন্সের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে জানিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফোলি বলেন,  “দেশে বর্তমানে বিদেশি কল আদান-প্রদানে ২৬টি ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে (আইজিডব্লিউ) রয়েছে। এর সংখ্যা দুই থেকে তিনের মধ্যে হলে নিয়ন্ত্রণ ও মানসম্মত সেবা দেওয়া সহজ হত। সরকার এ লাইসেন্স আরো দিচ্ছে।”

রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য করতে ফোরজি হ্যান্ডসেটসহ স্মার্টফোন ডিউটি ফ্রি করা উচিত।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, টেলিকম সেক্টরে নানা ধরনের লাইসেন্স রয়েছে, নানা রকম লাইসেন্স না দিয়ে ইউনিফাইড লাইসেন্স দেওয়া উচিত। এছাড়া তরঙ্গমূল্য কমানো উচিত।

প্যানেল আলোচনায় আইএলডিটিএস নীতিমালাসহ অন্যন্য নীতিমালা হালনাগাদ করা, নিয়ন্ত্রক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে গঠন করা সোশাল অবলিগেটরি ফান্ড- এসওএফ উন্নয়ন কাজে ব্যয় করাসহ অন্যান্য বিষয় উঠে আসে।