সাবেক প্রধান বিচারপতি তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা এবং সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন না বলে প্রকাশিত বইয়ে যে দাবি করেছেন, তা অসত্য, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক হুমায়ুন।
বিচারপতি এস কে সিনহার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ সম্প্রতি প্রকাশের পর থেকে নানা আলোচনা চলছে।
২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক এই প্রধান বিচারপতি তার বইতে দাবি করেছেন, তিনি ‘হুমকির মুখে’ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
শনিবার দুপুরে বার কাউন্সিল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যতই জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, ততই চমক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ যেটা দেখলাম সেটা হল আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি বই নিয়ে।
“এমন একটা সময় তিনি বইটা লিখেছেন, তার কয়েকদিন আগে আমরা যাকে আমাদের সংবিধান প্রণেতা বলি- ড. কামাল হোসেন একটি মতবিনিময় সভায় বলে ফেলেছিলেন যে, অল্পদিনের মধ্যেই এসকে সিনহা তথ্য নিয়ে আসছেন। তার মানে তাদের সাথে একটা আগাম যোগাযোগ ছিল যে, একটি বই বেরুবে। তার পরেই দেখেন বই বেরিয়েছে এবং সেটি নিয়ে ছুটির দিনেও আইনজীবী সমিতির একটি প্রেস ব্রিফিং হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সিনহা সাহেব যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তখন আমি সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির সভাপতি ছিলাম। আমার ওঠা-বসার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু উনি যে কথাগুলো বলেছেন যে, তিনি অসুস্থ না, তাকে জোর করে অসুস্থ বানানো হয়েছে- এগুলো কিন্তু কোনো সময়, কখনই আমাদের কাছে বলেননি। বলতে পারতেন।
“বার অ্যান্ড বেঞ্চ একে অপরের পরিপূরক, কিন্তু তিনি বলেননি। ফলে তিনি যে বইটি লিখেছেন, যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেগুলো অসত্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মোটিভেটেড। এই কারণে বলছি, তিনি দেশ থেকে চলে গেছেন প্রায় এক বছর। একটি ধুম্রজাল সৃষ্টি করার জন্যই, একটি চমক সৃষ্টির জন্যই এতদিন পরে এসে তিনি এসব তথ্য দিয়ে বই বের করলেন।”
এক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সভাপতি বলেন, “তিনি কি কি করেছেন তা হয়ত এখন দালিলিকভাবে বেরিয়ে আসবে সরকারি তথ্য-উপাত্তে। এই বইটি কিন্তু এদেশে এসেছে বলে আমার জানা নেই। যদি কেউ এনে থাকেন সেটা ভিন্ন কথা। যতটুকু পত্র-পত্রিকায় এসেছে তার থেকে বলছি। সেখানে তিনি দুটি কথা বলেছেন, একটি হল- তাকে জোর করে দেশত্যাগ করানো হয়েছে, পদত্যাগ করানো হয়েছে। আরেকটি হল যে, তিনি অসুস্থ ছিলেন না, তাকে অসুস্থ বানানো হয়েছে। দুটো কথাই অসত্য।”
“সুনির্দিষ্ট একটি দল বা গোষ্ঠীকে নির্বাচনের আগে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সুবিধা দিতেই এস কে সিনহা এই বই লিখেছেন, এটা পরিস্কার,” বলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
এই বইকে পুঁজি করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, পারভেজ আলম খান এবং সচিব তৌফিকুল ইসলাম।