যাত্রী কল্যাণের মোজাম্মেলকে আরেক মামলায় রিমান্ডে চায় পুলিশ 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর সমালোচনার মধ্যে এবার বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে চাইছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2018, 03:07 PM
Updated : 10 Sept 2018, 03:33 PM

এদিকে মোজাম্মেলের মুক্তি দাবি করে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ তাদের এই নেতা।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান দিয়ে মন্ত্রীর সমালোচনার মুখে পড়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেলকে চাঁদাবাজির এক মামলায় গত ৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দুলাল নামে এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে ঢাকার মিরপুর থানায় মামলা করার পরপরই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর আদালতের অনুমতি দিয়ে নিজেদের হেফাজতে রেখে মোজাম্মেলকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। এরপর পুলিশ আরও ৫ দিনের রিমান্ডে চাইলেও আদালত তাতে সাড়া না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

এরপর সোমবার ঢাকার কাফরুল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা একটি মামলায় মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের আদালতে এই আবেদন জানিয়ে মোজাম্মেলকে এই মামলায় ১০ দিনের জন্য রিমান্ডেও চেয়েছেন কাফরুল থানার এসআই মো. রায়হান।

বিচারক আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর এই আবেদনের শুনানির দিন রেখেছেন বলে মোজাম্মেলের আইনজীবী জায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

পুলিশের এই উদ্যোগের দিনই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মোজাম্মেলের মুক্তি চেয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সামসুদ্দীন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মোজাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে যাত্রী কল্যাণ সমিতি অত্যন্ত গঠনমূলকভাবে, সততার সাথে যাত্রী অধিকার আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছে। সব মহল এ আন্দোলনকে নৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। 

“দেশের ১৬ কোটি যাত্রীকে যারা জিম্মি করেছেন তারা গুটিকয়েক। এই অপশক্তি কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিয়ে, ভুল বুঝিয়ে নিজেদের অপকর্ম, সড়কে নৈরাজ্য চালানোর জন্য মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। তাতেও তাকে বিরত করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।”

মোজাম্মেল হক চৌধুরী

এই মামলার বাদীকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে আসা সংবাদ উদ্ধৃত করে সামসুদ্দীন বলেন, “প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই মিথ্যা মামলার সত্য উদ্ঘাটন করে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করেছে, সত্য বের হয়ে এসেছে। 

“বাদী যখন বলে, ‘আমি জানি না, আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয়েছে, আমি মোজাম্মেল সাহেবকে কোনোদিন দেখিনি’।”

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হকের স্ত্রী রিজু আক্তার চৌধুরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্বামীকে নির্দোষ দাবি করেন। স্বামীর মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি খায়রুল আমিন, যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন আহেমদ, নির্বাহী সদস্য আমান উল্যাহ মাহফুজ, ঢাকা মহানগর যাত্রী কল্যাণ সমিতির সদস্য মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে ‘ভুইফোঁড়’ সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদের পরিসংখ্যান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে সামসুদ্দীন বলেন, “সড়ক নিরাপত্তায় সরকার যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কাজ করে। আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য কাউকে দায়ী করা না, যাত্রী সাধারণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ দেখিয়ে দেওয়া।”

এটি নিবন্ধিত একটি সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন “সংগঠনটি ইতোমধ্যে যাত্রী অধিকার আদায়ে একমাত্র সংগঠন হিসেবে গণমাধ্যমের সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।”