আমি তো মূর্তি হয়ে বসে থাকতে পারি না: মাহবুব তালুকদার

ইসির ঘোষিত ‘রোডম্যাপের’ বাইরে গিয়ে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে হঠাৎ করে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ায় কমিশন সভা বর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2018, 01:18 PM
Updated : 30 August 2018, 01:18 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে কমিশন সভা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য উনারা (সিইসি ও তিন নির্বাচন কমিশনার) বসে বসে আরপিও সংশোধন করবেন; আর আমি সেখানে মূর্তির মতো বসে থাকব, তা তো হয় না। এজন্য বের হয়ে এসেছি।”

ইসি এতদিন স্থানীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনেও ই-ভোটিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে এর বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য ছাড়া সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না বলে এতদিন বলে আসছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের উদ্যোগ নিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন।

সকালে বৈঠকের শুরুতেই সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বেরিয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার।

এরপর অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান সিইসি নূরুল হুদা।

বিকাল ৫টায় সভা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতের ভিত্তিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কারের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“উনি (মাহবুব তালুকদার) ভিন্ন পোষণ করেছেন; আমরা চারজন সম্মত হয়েছি।”

এরপর নিজের বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “সভা থেকে বেরিয়েছি, কারণ আরপিও সংশোধনের বিষয়ে সভার কার্যপত্রে ছিল। আমি মোটেও চাই না আরপিও সংশোধন হোক। আমি মনে করি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না।“

ইভিএমসহ নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ইসি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখতে না পারার জন্য হতাশার কথাও জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

“আমরা তো আমাদের কথা রাখতে পারছি না।…আমরা বলেছিলাম সব দলের ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করব না। প্রথম থেকেই বলে আসছি, সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। রোডম্যাপের কোথাও ইভিএম নেই।”

সিইসি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আইনি সুযোগ রাখার উদ্যোগ নিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেননি তারা।

বিরোধিতা সত্ত্বেও ইভিএমের পক্ষে কমিশন অবস্থান নিলে তখন পরিস্থিতি দেখে নিজের করণীয় ঠিক করবেন বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “আমি পাঁচ টুকরার এক টুকরা। আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ নই, সংখ্যালঘিষ্ঠ। আমি এখনও মনে করি, সংসদ নির্বাচনের এখনও অনেক সময়। আমি তো গণতন্ত্রমনা মানুষ। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করলে তখন নির্ধারণ করব। তখনকার অবস্থা কী হবে, তা তো এখন বলতে পারি না।”

কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত থাকলেও ইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চান না মাহবুব তালুকদার।

“আমি বিপরীতে অবস্থান নিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে নয়। এটা মতের বিরুদ্ধে ভিন্নমত। সিইসির বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করব না। অন্যের মতকে সাপোর্ট করতে হবে, এ ধরনের নীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকবে।”

এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে বিধি সংশোধনের ক্ষেত্রেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।

ইভিএম নিয়ে তার বিরোধিতাও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ নিয়ে প্রবীণ রাজনীতিক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ভিন্নমত হতেই পারে, তবে সব কিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।

এই প্রসঙ্গে তিনি বিএনপির প্রস্তাবিত নাম থেকে সাবেক আমলা মাহবুব তালুকদারকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথা সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন।