পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, গুলশান লেকের পশ্চিম পাড়ে মহাখালী-গুলশান সড়ক সংলগ্ন ওই সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে পারটেক্স গ্রুপ।
পারটেক্স গ্রুপের কর্মকর্তারা জমি দখলের এই অভিযোগ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। ওই জমি নিয়ে মামলা চলছে বলে দাবি করেছেন কোম্পানির এক কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজউকের জন্য সবুজ পার্কসহ একটি পরিবেশবান্ধব গ্রিন বিল্ডিং নির্মাণ করতে মহাখালী মৌজার দুই বিঘা জমি বাছাই করা হয়।
প্রকল্প এলাকা দেখে এসে আইএমইডির প্রতিনিধি দল যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে প্রকল্প এলাকার ০.৩৩ একর বা এক বিঘার বেশি সরকারি জমি পারটেক্স গ্রুপের হাতে বেদখল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
ওই জমির পাশে পারটেক্স গ্রুপের নিজেদের কেনা জমি রয়েছে। কিন্তু নিজেদের জমি ছাড়িয়ে তারা সরকারি জমিও দখল করে নিয়েছেন বলে আইএমইডির অভিযোগ। সরকারি জমির সড়ক সংলগ্ন অংশটি পারটেক্স দখল করে রাখায় ভেতরে যাওয়ার পথও এখন বন্ধ।
আইএমইডির মহাপরিচালক রফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা জমিটি দেখতে গিয়ে পারটেক্স গ্রুপের ‘বাধার’ মুখেও পড়েছিলেন।
“প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করতেই অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় আমরা এলাকাটি পরিদর্শনে যাই। প্রকল্প এলাকায় ঢুকতে চাইলে প্রথমেই পারটেক্স গ্রুপের লোকজন আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়। পরে আমরা খালের অংশের জমি দেখার কথা বলে ঢুকি।
গুলশান-মহাখালী সড়ক সংলগ্ন জমিতে একটি স্থাপনা করে পারটেক্স গ্রুপের সাইনবোর্ড দেখে আসার কথাও বলেন তিনি।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ব্র্যাক ইন সেন্টার থেকে গুলশান লেক পর্যন্ত পুরো জায়গাজুড়ে পারটেক্স গ্রুপ অফিস। মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকার মহাখালী-গুলশান সড়ক সংলগ্ন ৭৪ নম্বর প্লটটি গুলশান লেক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
সড়ক সংলগ্ন ৩৩ শতক সরকারি জমি পারটেক্স গ্রুপের দখলে। ওই জমির পরেও পারটেক্স গ্রুপের কিছু জমি রয়েছে। কিন্তু পারটেক্স গ্রুপ তাদের জমির বাইরে সরকারি জমিতেও স্থাপনা করেছে। এর ফলে পেছনে থাকা সরকারি জমিতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের অভিযোগের বিষয়ে পারটেক্স গ্রুপের বক্তব্য জানতে এই শিল্প গোষ্ঠীর পরিচালক শওকত আজিজ রুবেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরপর তেজগাঁওয়ে শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারের পারটেক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে মালিক পক্ষের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
মামলার বিষয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টেোর ডটকমকে বলেন, পারটেক্স গ্রুপ তাদের জমির উপর বহুতল ভবন তৈরির জন্য রাজউকের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, কিন্তু রাজউক অনুমোদন না দেওয়ায় তারা আদালতে যায়।
পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে ছেলেরা এখন দেখভাল করেন।
পূর্বাচলে রাজউকের দুটি প্লট দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়ার মামলায় গত বছর হাসেমপুত্র রুবেল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুদকের ওই মামলায় তার সঙ্গে আসামি রয়েছেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবালউদ্দিন চৌধুরী। তিনিও তখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এদিকে মহাখালীর জমিটি পারটেক্স গ্রুপের দখলে যাওয়ার পেছনে রাজউকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না, তা খুঁজে দেখার সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত মুসলেমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মাত্র কয়েক মাস আগে পরিচালক হয়েছি। এ প্রকল্পের জমি পারটেক্স গ্রুপ দখল করেছে কি না, তা আমি বলতে পারব না। রাজউকের ল্যান্ড বিভাগ এ বিষয়ে জানতে পারবে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পারটেক্স গ্রুপ যে জমি দখল করে নিয়েছে, তা অবমুক্ত করা হবে।”
প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে পারটেক্সের কাছে যে জমি আছে, তাও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন প্রকল্প পরিচালক।
এখন পরবর্তী পদক্ষেপ কী- জানতে চাইলে রাহাত বলেন, “গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এমন পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, আমরা তার দিয়ে তাকিয়ে আছি।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটি প্রতিবেদন তৈরি করছি। শিগগির প্রতিবেদনটি আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠাব।”
ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘ঢাকাস্থ মহাখালীতে বহুতল গ্রিন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রায় ৮০১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে তিতুমীর কলেজের পাশে রাজউকের মহাখালী কম্পাউন্ডের পূর্বাংশে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কথা ছিল।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজউক চেয়ারম্যানকে তিতুমীর কলেজের পাশে না করে অন্য কোনো জায়গায় পরিবেশবান্ধব ও সবুজ পার্কসহ এ ভবনটি নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। ৫০০ গাড়ির পার্ক করার কথাও রয়েছে প্রস্তাবনায়।
এরপর প্রকল্প পরিচালনা কমিটি ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই থেকে গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জমি সংস্থানের জন্য দফায় দফায় বৈঠক করে। এরপরই মহাখালীর জমিটি পরিদর্শনে গিয়েছিল প্রতিনিধি দলটি।