তিনি বলেছেন, এখন পরীক্ষা শেষ করতে যেরকম প্রায় দুই মাস সময় লেগে যায়, তা কমিয়ে আনতে পারলে শিক্ষার্থীদের যেমন আরও বেশি মনোযোগী করা যাবে, পরীক্ষা নিয়ে ‘গুজব আর অপপ্রচারের’ হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এই পরামর্শ আসে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ২৬২ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। পাসের হার আর পূর্ণ জিপিএ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা- দুটোই গতবারের চেয়ে কমেছে।
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বেকায়দায় ছিল শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এবার নতুন কিছু কড়াকড়ি আরোপের ফলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়।
এবার এইচএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ না ওঠায় সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, “এবারে যে পদ্ধতিটা নেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই চমৎকার। আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীরা চলে যাবে পরীক্ষার হলে। ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে, কয়েকটা সেটের প্রশ্নপত্র থাকে, কোন সেটটা দেওয়া হবে। তার ফলে নকল বন্ধ হয়েছে।”
তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা একটু পড়াশোনা করলেই যেখানে ভালো রেজাল্ট করতে পারে, সেখানে তারা নকল করবে কেন?
এবার পরীক্ষা শেষ করার পর ৫৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে পারায় শিক্ষক এবং শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একটা ছোট্ট অনুরোধ আমার থাকবে, সেটা হল পরীক্ষার সময়টা। পরীক্ষার একটা দীর্ঘ সময়.. দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪শে মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই অত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়…।”
৭১ বছর বয়সী শেখ হাসিনা তার সময়ের পরীক্ষা পদ্ধতির কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমাদের দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হত। সকালে এক পেপার, বিকালে এক পেপার। আমাদের তো দম ফেলার সময়ই থাকত না, সাত দিনে পরীক্ষা শেষ।… ১০টা সাবজেক্ট, মাঝখানে দুই দিন ছুটি ধরে আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।”
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।”
আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে মনোবল না হারাতে এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তাদের বলেন, “এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়লে কৃতকার্য হবে। নিজের ইচ্ছায় পড়তে হবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার পরামর্শ- “ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করবেন না। কেন খারাপ করল, তা খুঁজে বের করুন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার চেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, “আমি একটা কথা বলব আমাদের ছেলে মেয়েদের, একটা সম্পদ- শিক্ষা, এই সম্পদটা কেউ কখনও কেড়ে নিতে পারবে না। ছিনতাইকারী কখনও নিতে পারবে না, চুরি ডাকাতি করেও নিতে পারবে না। শিক্ষা হচ্ছে সবচাইতে বড় সম্পদ। কাজেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে তাহলে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যাবে “