দ্বাদশ শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৭২৬ জন।
সেই হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮ হাজার ৪৬৪ জন।
সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।
পাসের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেন, “যে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার গুণগত মানের উন্নয়ন করতে চাচ্ছি। এজন্য আমার কড়াকড়িভাবে খাতা দেখছি।”
তিনি বলেন, “দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪শে মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই অত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়…।
“এটাকে আরেকটু কমিয়ে আনার ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর এখানে ওই যে নানা ধরনের কথা প্রচার টচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
চলতি বছর ২ এপ্রিল থেকে ১৩ মে এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা চলে। এরপর ১৪ থেকে ২৩ মে নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা।
বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়।
প্রধানমন্ত্রী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে মনোবল না হারিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।
দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) এবং নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারছেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ই-মেইলে কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠানের ফলাফলের সফটকপি পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ফলের হার্ডকপি সংগ্রহ করা যাবে। বোর্ড থেকে ফলাফলের কপি সরবরাহ করা হবে না।
এক নজরে ফলাফল
বোর্ড | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ (জন) | পাসের হার (%) | পাসের হার (%) |
| ২০১৮ |
| ২০১৭ | ২০১৬ |
ঢাকা | ৬৬.১৩ | ১২,৯৩৮ | ৬৯.৭৪ | ৭৩.৫৩ |
রাজশাহী | ৬৬.৫১ | ৪,১৩৮ | ৭১.৩০ | ৭৫.৪০ |
কুমিল্লা | ৬৫.৪২ | ৯৪৪ | ৪৯.৫২ | ৬৪.৪৯ |
যশোর | ৬০.৪০ | ২,০৮৯ | ৭০.০২ | ৮৩.৪২ |
চট্টগ্রাম | ৬২.৭৩ | ১,৬১৩ | ৬১.০৯ | ৬৪.৬০ |
বরিশাল | ৭০.৫৫ | ৬৭০ | ৭০.২৮ | ৭০.১৩ |
সিলেট | ৬২.১১ | ৮৭৩ | ৭২.০০ | ৬৮.৫৯ |
দিনাজপুর | ৬০.২১ | ২,২৯৭ | ৬৫.৪৪ | ৭০.৬৪ |
মাদ্রাসা | ৭৮.৬৭ | ১,২৪৪ | ৭৭.০২ | ৮৮.১৯ |
কারিগরি | ৭৫.৫০ | ২,৪৫৬ | ৮১.৩৩ | ৮৪.৫৭ |
ডিআইবিএস (ঢাকা) | ৮৭.৮২ | ০০ | ৭১.৫৮ | ৮১.৪৬ |
মোট | ৬৬.৬৪ | ২৯,২৬২ | ৬৮.৯১ | ৭৪.৭০ |
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দশ শিক্ষা বোর্ডে এবার সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন।
এর মধ্যে এইচএসসিতে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৮ জন। অর্থাৎ, পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫৬২ জন জিপিএ -৫ পেয়েছে।
মাদ্রাসা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৭ হাজার ৭৯৩ জনের মধ্যে ৭৬ হাজার ৯৩২ জন পাস করেছে। অর্থাৎ, পাসের হার ৭৮ দ্শমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন।
আর কারিগরি ও ভোকেশনাল বোর্ড থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৮৯ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৫৬ জন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, পাসের হারে দিক দিয়ে এবার মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার যেখানে ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সেখানে ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে।
গণভবনের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর হাতে এবারের ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেওয়ার পর ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ল্যাপটপের বোতাম চেপে ফলাফল প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেত্রকোণার কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন।
ফল পুনঃনিরীক্ষা
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী ২০ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনালে আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-PIN) দেওয়া হবে।
আবেদনে সম্মত থাকলে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য দেড়শ’ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে।
যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে।
একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।