বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের স্বাক্ষরে আসা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাউকে প্রবেশ ও গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খণ্ডিতভাবে তথ্য প্রচারের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।”
দুদিন আগে গত ৯ অগাস্ট এই জনসংযোগ দপ্তর থেকেই আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল।
তাতে বলা হয়েছিল, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধুমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে অবস্থান ও ঘোরাফেরা এবং কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।”
গত কিছু দিন ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে গত ৫ জুলাই প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে বসে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, যা ৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের ওই বৈঠকে ছাত্রাবাসগুলোতে বহিরাগতদের অবস্থানে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গমনাগমনেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানানো হয়েছিল।
রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে চলাচলের পথ যেমন রয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রমও রয়েছে।
প্রভোস্ট কমিটির ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। প্রতিবাদ আসে ক্ষমতাসীন দলের জোট শরিক বিভিন্ন দলের কাছ থেকেও।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বুধবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। অন্যদিকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ।
এর মধ্যেই বুধবার ‘প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্ত বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে।
এতে আরও বলা হয়, “যেসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কথা প্রভোস্ট কমিটি বলেছে, সেগুলো ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতি, নীতি ও সিদ্ধান্তের আলোকে নেওয়া হয়েছে।
“বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সভা/সমাবেশসহ যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি আবশ্যক হয়, এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে সব সময়েই পূর্বের ন্যায় বর্তমানেও নিরাপত্তা প্রহরী দায়িত্ব পালন করছে।
“তাদের দায়িত্ব পালনের অনুকূল কর্ম-পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা প্রহরীদের দায়িত্ব ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। বর্তমান পদক্ষেপ তার অংশ মাত্র।”
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাওয়ার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনিও বলেন, ক্যাম্পাসে গমনাগমনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
“প্রবেশ আর কর্মসূচি দুইটা ভিন্ন জিনিস। প্রবেশে কোনো বাধা নাই। এটা অনেকে বোঝে না। না বুঝে অন্যভাবে প্রচারের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে উৎসাহিত না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে গত এপ্রিলে উপাচার্যের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছিল।
আন্দোলনকারীরা ওই হামলার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পুলিশের করা মামলায় আন্দোলনকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।