শিশু পার্কের ফলক থেকে সরছে জিয়ার নাম

রাজধানীর শাহবাগে শিশু পার্কের ফলক থেকে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের নাম এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 07:24 AM
Updated : 21 March 2018, 07:32 AM

তিনি বলেছেন, নতুন নাম হবে শুধু ‘শিশু পার্ক’। বর্তমান অবস্থান থেকে কিছুটা সরিয়ে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হবে এই পার্ককে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গাটিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে হবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি নিয়ে বুধবার পিআইডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ওই শিশু পার্কটির নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না। নতুনভাবে ব্যাপক প্রচারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমরা যখন ব্যাপক প্রচারে নামব, তখন এর প্রতিফলন হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “ওই স্থানেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। গণমাধ্যমে জিয়াকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, মুসলমানদের পরাজয়ের কোনো স্মৃতি চিহ্ন রাখতে নেই, তাই ওখানে শিশু পার্ক করা হয়েছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশু পার্কটির জন্য নতুন করে কোনো নাম ঠিক করা হয়নি।

“নামটি শিশু পার্কই থাকবে। তবে পুরনো নামফলকটি এখনও রয়ে গেছে। এটি আমাদের দৃষ্টিতে ছিল না। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে তা সরিয়ে ফেলব।” 

জিয়ার সময়েই ১৯৭৯ সালে ঢাকার শাহবাগে শিশু পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কয়েক দফা নাম বদলের পর ২০০৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের সময় এর নাম হয় শহীদ জিয়া শিশু পার্ক।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন; ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালে ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল জিয়া ওই দায়িত্বও নেন।

সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে। পরে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

২০১০ সালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের এক রায়ে বলা হয়, “খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের মতো এইচএম এরশাদও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।"

২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিল। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে জিয়াকে দেওয়া ওই রাষ্ট্রীয় সম্মান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।