ঢাকায় ঠিকাদার নাসির হত্যাকাণ্ডে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঢাকার মহাখালীতে ঠিকাদার নাসির কাজী খুনের সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের মেয়ে ও মামলার বাদী নার্গিস আক্তার নিপু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 05:50 PM
Updated : 20 March 2018, 06:50 PM

মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন টঙ্গি সরকারি কলেজের এই শিক্ষার্থী।

নিপুর সঙ্গে তার মা সেলিনা আক্তার ও স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।

তবে অভিযোগের মুখে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেছেন, নিহত নাসিরের মেয়ের এই অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে মহাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশে দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে নাসির কাজীকে হত্যা করে। তার বুক, পেট, হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অংশে নয়টি গুলি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দিনই বনানী থানায় একটি মামলা করেন নিহতের মেয়ে।

খুনের ঘটনার প্রমাণ না পাওয়ার জন্য হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ২৬টি সিসি ক্যামেরার সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি করেন নিপু।

সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবা বেঁচে থাকতে বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সবুজ ও দেশের বাইরে থাকা ব্যবসায়ী মিন্টু সরদার তাকে খুন করতে পারে।

“খুনের পর থানায় মামলা করতে গিয়ে ওই দুইজনের নাম উল্লেখ করি। কিন্তু পুলিশ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলাটি গ্রহণ করে।”

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার মাছুয়া খালীতে জন্ম নেওয়া নাসির কাজী একই থানার ইদুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বি এম আবদুল খালেক খুনের চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন।

২০০৪ সালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে খুন হওয়া আবদুল খালেকের ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আবদুল খালেক একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুদক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেছিলেন আমার বাবা। এতে খালেকের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়।

“খালেক খুন হলে বাবাকে রাজসাক্ষী করতে চাইলে এতে তিনি রাজি হয়নি। তখন বাবাকে ওই মামলার ১০ জন আসামির মধ্যে নয় নম্বর আসামি করা হয়। পরে তাকে এক নম্বর আসামি দেখিয়ে ওই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। এরপর তিনি ১৪ মাস কারাবাস শেষে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি আসা শুরু হয়।”

ব্যবসায়ী মিন্টু সরদার শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের বিএনপি নেতা বলে অভিযোগ করে নিপু।

তিনি বলেন, “মিন্টু বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে লোক দিয়ে বাবাকে হত্যা করেছেন তারা।”

নাসির কাজী খুনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তার মেয়ে নিপু বলেন, “বাবা হত্যাকাণ্ডের ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ডিবির লোকেরা আসেন। মিন্টু রোড থেকে এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ডিবির সদস্যরা চলে আসতে পারল, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।”

ইতোমধ্যে এই খুনের মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে বাদী বলেন, “আমাকে কোনো কিছু না জানিয়ে মামলাটি হঠাৎ করে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত, যিনি বাবাকে হত্যার মূল নায়ক, সেখানে এই মামলা স্থানান্তর করে ন্যায় বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

নিপুর অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন নিপু, তা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।”

তার বাবার হত্যাকাণ্ডের মামলায়  নাসির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মামলার প্রয়োজনেই তার বেঁচে থাকা দরকার ছিল। তিনি বেঁচে থাকলে মামলার একটি ফল পাওয়া যেত।”

নাসিরকে কারা হত্যা করেছে, তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসাদুজ্জামান।