এ কে আজাদের বাড়ি ভাঙতে রাজউকের অভিযান

হা-মীম গ্রুপের মালিক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের গুলশানের বাড়ির সামনের একটি অংশ রাজউক ভেঙে দিয়েছে অনুমোদিত নকশা না থাকার অভিযোগে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 06:22 AM
Updated : 20 March 2018, 03:21 PM

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে রাজউকের পরিচালক অলিউর রহমানের নেতৃত্বে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটি ভাঙতে অভিযান শুরু হয়।

বেলা ১টার দিকে বিরতিতে যাওয়ার আগে ১ বিঘা ৯ কাঠা ১৩ ছটাক জমির একাংশে তৈরি ওই দোতলা বাড়ির পার্কিং শেড, নিচতলার ওয়েটিং রুমের কিছু অংশ, দোতলার একটি বেড রুম এবং ড্রইং রুমের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

অলিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের টাস্কফোর্স এসে এ বাড়িতে রাজউক অনুমোদিত কোনো নকশা পায়নি। যারা বাড়ির মালিক, তারা রাজউক অনুমোদিত নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি একটি অবৈধ ভবন, রাজউকের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা বাড়িটি ভেঙে ফেলছি।”

অবশ্য ভবন ভাঙার কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিকাল ৪টার দিকে দিনের মতো অভিযান স্থগিত রেখে ওই বাড়ি ছাড়েন রাজউক কর্মীরা।

তারা চলে যাওয়ার পর এ কে আজাদের শ্যালক শোয়েবুল ইসলাম ওই বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের বলেন, একটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছিল। রাজউক কর্মকর্তারা যে নথি চেয়েছিলেন, তা দেখানোর পর তারা চলে গেছেন।

সকালে অভিযানের শুরুতে বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরে এক্সক্যাভেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে ওই বাড়ির সীমানা দেয়াল ও প্রবেশ পথ ভাঙতে শুরু করেন রাজউক কর্মীরা। 

অভিযানের জন্য গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কের উত্তর প্রান্তে ৮৪ নম্বর সড়কের মুখে এবং ৮৭ নম্বর সড়কের মুখ থেকে ৮৬ নম্বর সড়কের মাঝামাঝি পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই বাড়ির সামনের দেয়াল, গাড়ি বারান্দা ও একটি ব্যালকনির কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে মালামাল বের করে নিতে সময় দেওয়া হয়।

অভিযান চলাকালে ওই বাড়ি থেকে ব্যাগ ও বিভিন্ন সামগ্রী হাতে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বাড়ির সামনের খোলা জায়গাতেও বিভিন্ন আসবাবপত্র ও জিনিসপত্র রাখা ছিল।

রাজউকের ভূমি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলশানের ওই প্লট ১৯৬০ সালে মো. ইউনূস নামে এক ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে হস্তান্তর সুত্রে মালিক হন ব্যবসায়ী আজাদ। তার আগে ওই প্লটের মালিকানা ছিল একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের হাতে। তখন ওই দোতলা দালানে একটি স্কুল ছিল।

বাড়ির মালিকানা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অলিউর রহমান বলেন, “বাড়ির মালিক কে তা আপনারা জানেন...। মালিক বিষয় নয়, আমরা দেখি যে ভবন রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হয়েছে কি হয়নি।”

এ কে আজাদের মালিকানাধীন টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের দুই প্রতিষ্ঠান দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে অভিযানের সময় ওই বাড়ির সামনে দেখা যায়।

দুপুরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারসহ কয়েকজন নেতাকেও সেখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়; এ কে আজাদ ওই সংগঠনের সভাপতি।

শোয়েব সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আমাদের এক সপ্তাহ আগে নোটিস দেবে, যদি আমরা ভুল করে থাকি। এটা সাধারণ একটা দোতলা বাড়ি, এরকম হাজার হাজার বাড়ি আছে। তারা তো আমাদের সাত দিন আগে নোটিস দিতে পারত, নোটিস দেয়নি।”

বাড়ি ভেঙে ফেলার আগে কোনো নোটিস দেওয়া হয়েছিল কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে রাজউকের পরিচালক অলিউর বলেন, “আমাদের অথরাইজড লোক এসে দেখেছে, নকশা চেয়েছে। এটা আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম। ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত আমরা মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো হয়েছিল- যেসব ভবন অবৈধ, সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই আমরা আমাদের অভিযান শুরু করেছি। এটা চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে।”

শোয়েব বলেন, “আপনি আমাকে হয়রানি করতে চান, আর একটা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে করে দিলেন! আজাদ স্যারের মতো একটা লোককে আমি জানি না কী কারণে এমন করেছে।”

তিনি বলেন, “আসলে এটা পুরোটাই একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, তারা জেনেছিল যে বাড়ির নকশা নেই, এ কারণেই তারা এটা ভেঙেছে। আমরা যখন তাদেরকে ডকুমেন্ট দেখিয়েছি, তখন তারা থেমেছে এবং চলে গেছে।”

শোয়েব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ বাড়ি করা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। নির্মাণের সময়ের একটি নকশা তাদের কাছে আছে এবং সেটি তারা রাজউক কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন।

বিকাল ৪টার পর যন্ত্রপাতি গুটিয়ে ওই ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অলিউর সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কার্যক্রম মঙ্গলবারের মতো স্থগিত করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বেলা ফুরিয়ে আসার কথা বলেন। 

অভিযান আবার কখন শুরু হবে জানতে চাইলে এই রাজউক কর্মকর্তা বলেন, “তখন আপনারা জানতে পারবেন।”

বেলা ১টায় বিরতিতে যাওয়ার পর ৪টা পর্যন্ত ভবন ভাঙার কাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি কেন জানতে চাইলে  অলিউর বলেন, “তখন আমরা ভেতরে ছিলাম।

ভবনটির নকশা রাজউকের অনুমোদিত নয় বলে ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে একজন সাংবাদিক শোয়েবকে বলেন, রাজউক কর্মকর্তারা বলে গেছেন যে আবারও অভিযান হবে।

জবাবে শোয়েব বলেন, “আপনারা দেখেছেন তারা দুপুরে বিরতিতে যাওয়ার পর আর কিছু করেনি। আর আসে কি না, দেখেন। আশা করি, তারা আর আসবে না।”

রাজউকের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে শোয়েব বলেন, “আমার বড় ভাই এখনও আসেনি, তিনি আসার পর তার সাথে বসে পদক্ষেপ নেব।”

যা বললেন আজাদ

রাতে এক বিবৃতিতে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, “রাজউকের একটি দল গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে আমার বাড়িতে হাজির হয়ে বাড়ির কোনো বৈধ নকশা নেই বলে তারা বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করে। বাড়ির সকল বৈধ কাগজপত্র দেখালেও তারা তা আমলে নেয়নি।

“দুপুর ১টার মধ্যে বাড়ির একাংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আমি রাজউকের চেয়ারম্যানকে অনুমোদিত নকশা, নামজারিসহ বাড়ির যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র দেখালে ভাঙার কার্যক্রম বন্ধ হয়।”