‘কোচিং সেন্টার বন্ধ ছিল, প্রশ্ন তো ফাঁস হয়েছে’

কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার পরও এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোচিং সেন্টারগুলোর মালিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2018, 11:55 AM
Updated : 25 Feb 2018, 11:55 AM

এসএসসি পরীক্ষার কারণে সরকারের নির্দেশ মেনে প্রায় এক মাস কোচিং বন্ধ রাখার পর রোববার গণমাধ্যমের সামনে আসেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের প্রতিনিধিরা।

 জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলেও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পারাই সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

 সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. ইমাদুল হক (ই-হক) সাংবাদিকদের বলেন, “এবার কোচিং সেন্টার বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, প্রায় প্রতি পরীক্ষায়ই হয়েছে। ফলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে কোচিং সেন্টার বন্ধ করা অগ্রহণযোগ্য।”

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষক গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন ফাঁসে ৪২ জন স্কুল শিক্ষক, ৯২ জন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার ৮৫ জনের নাম এসেছে। এর মধ্যে কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি অভিযোগ আসলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।”

প্রশ্ন ফাঁসকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান কোচিং সেন্টারগুলোর মালিকদের এই নেতা। 

তিনি বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের সাথে কোচিং সেন্টারের সম্পৃক্ততা নেই। কারণ প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে বিতরণ কিংবা পরীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই কোচিং সেন্টার বন্ধ করা যুক্তিসঙ্গত না। আগামীতে এমন সিদ্ধান্ত না নিতে সরকারকে আমরা অনুরোধ করছি।”

সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় ইমাদুল হক আরও বলেন, “আইইএলটিএস, টোফেল, জিআরই, জিম্যাট এর মতো ইংরেজি শেখার সকল কোচিং সেন্টার একমাস বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল একই ধরনের শিক্ষা প্রদান করেও এ সময়ে চালু ছিল। এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণ কী?”

স্কুল-কলেজের বেতনভোগী শিক্ষকরা জড়িত নন- এমন কোচিং সেন্টারকে ‘সহায়ক শিক্ষা কেন্দ্র’ হিসেবে চালু রাখতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি জানান তিনি।

“সহায়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা থাকার কারণেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বসেরা দেশগুলোতে অসংখ্য কোচিং সেন্টার রয়েছে। কোনো কোনো দেশের আইনেও সহায়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

“খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র ও মেধাবীরা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়ে নিজেদের পরিবারের ব্যয়ভারও বহন করে। কোচিং সেন্টার বন্ধ হলে উদ্যোক্তা ও শিক্ষকসহ প্রায় ১৫ লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে। ফলে যেমন সরকার রাজস্ব হারাবে, তেমনি শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়বে। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে উপযুক্ত শিক্ষাসেবা থেকে।”

ইমাদুল হক বলেন, ছুটি, জাতীয় দিবস, পাবলিক পরীক্ষা মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে গড়ে প্রায় ২০০ দিন ক্লাস হয় না। অবশিষ্ট দিনগুলোরও প্রায় ৫০ দিন বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা চলে। ফলে বছরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সুযোগ পায় ১১৫-১২৫ দিন। এই কারণে সিলেবাস শেষ করতে বিকল্প হিসেবে কাজ করে কোচিং সেন্টারগুলো।

“যারা আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে গৃহশিক্ষক রাখতে পারেন না, তারাও কোচিং সেন্টারের সাহায্য নেন। ফলে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ হলে শিক্ষা ব্যয় বাড়বে, নিম্নবিত্ত শ্রেণি আবারও শিক্ষাবিমুখ হবে।”

 কোচিং সেন্টার চালু থাকায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেধাবীদের থেকে শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে শিক্ষা সহায়তা নিতে পারছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুল হাসান সোহাগ, সৈয়দ মাহবুবুল হক পলাশ, আবু রায়হান, পলাশ সরকার, মাহবুব আরেফিন প্রমুখ।