বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘চতুর্থ সমধারা কবিতা উৎসবে’ কবির হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। গেল বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
সাহিত্যের কাগজ সমাধারা আয়োজিত বৃহস্পতিবারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার ২৫০ জন কবি। তাদের ২০০টি কবিতার সমন্বয়ে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ‘পদাবলীর যাত্রা’ কাব্যগ্রন্থের।
কবিতা উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন পশ্চিমবঙ্গের কবি মৃণাল বসু চৌধুরী। সমধারার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি কবি কাইয়ুম নিজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাষা সংগ্রামী অধ্যাপক শরিফা খাতুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও কবি হেলাল হাফিজ।
শরিফা খাতুন বলেন, “আমি এখানে প্রধান অতিথি হয়ে আসার পেছনে কারণ হচ্ছে, যে ভাষায় আমাদের কবিরা কবিতা লেখেন, সে ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য আমি আন্দোলন করেছি। সে সময় আমি ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলাম।”
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাকে চেনেন কি না জানি না তবে আজ যিনি পুরস্কৃত হলেন সেই জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে আমি চিনি। তার কবিতা পাঠের আলাদা আনন্দ রয়েছে। উনার মতো কবিরা সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠকদের আনন্দ দিয়ে যান।”
নূরুল হুদাকে নিয়ে তিনি বলেন, “আজ থেকে ৫০ বা ৫১ বছর আগে আমরা পরিচিত হই। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে আর আমি পড়তাম বাংলায়। এই বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমি, নূরুল হুদা আর কবি আসাদ চৌধুরী ঘুরে বেড়াইনি।
“যারা কবিতা লেখা শুরু করেছেন বা করবেন তাদের বলি, জীবনের অনেকটা সময় কবিতাকে দিতে হবে। কবিতা লিখতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় নারীদের। তারা সন্তান, গৃহবন্ধুকে সময় দেওয়াসহ সব দায়িত্ব পালন শেষে কবিতা লিখেন।”
‘প্রিয়বন্ধু’ নূরুল হুদার পুরস্কারপ্রাপ্তিতে নিজেই পুরস্কার লাভের আনন্দ পাচ্ছেন মন্তব্য করে বন্ধুকে উৎসর্গ করে একাধিক কবিতা পাঠ করেন হেলাল হাফিজ।
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী বলেন, “এদেশে হুদা ভাই (নূরুল হুদা) যতটা জনপ্রিয়, আমাদের পশ্চিমবঙ্গে তিনি তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। সেখানে অনেকেই আছেন যারা হুদা ভাই কলকাতায় এসেছেন শুনলে দেখা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন।”
কবিতা নিয়ে তিনি বলেন, “অক্ষরের সাথে অক্ষরের মিলনে হয় শব্দ। আর শব্দের সাথে শব্দের মিলনে হয় কবিতা। মূলত ‘হয়ে ওঠাটাই’ হচ্ছে কবিতা। আপনি যা-ই লিখুন না কেন তা যদি কিছু একটা ‘হয়ে ওঠে’ তবে তা কবিতা। আমি ৫৩ বছর ধরে লিখছি। এখনও আমি কিছুই লিখতে পারিনি, যা মানুষ মনে রাখবে।”
অনুষ্ঠানে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়, পুরস্কার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় নগদ টাকা ও তার একটি পোর্ট্রেট।
পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি নূরুল হুদা বলেন, “কবিতা এক রকমের বিন্যাস। সৃষ্টির প্রথম শর্তই হচ্ছে বিন্যাস। জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ কবিতা। প্রকৃত, বিশুদ্ধ কবিতা লিখলে একদিন আমরা কবি হয়ে উঠব। কবিতার ক্ষেত্রে কোনো ‘চাতুর্য’ টেকে না।
“কবিতা হচ্ছে একটা পাখি। একটা চড়ুই পাখি। এটি আপনার ভাবনার ডালে আসে। একটু পর উড়ে যায়। তাই এই পাখিটিকে ধরে রাখতে হবে। কবিতাকে ধরে রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কবি কাইয়ুম নিজামী বলেন, “একটি ফুলের জন্য যেমন আমরা যুদ্ধ করি তেমনি একটি কবিতার জন্যেও আমরা যুদ্ধ করি। কারণ একটি কবিতা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। যেমনিভাবে আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে ৭ মার্চের কবিতা।”
কবিদের সম্মান জানানোর এই আয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ক্রিকেট খেলার জন্য কোটি টাকা খরচ হয়, ভারত থেকে নায়িকা আনতে কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু কবিতার জন্য টাকা চাইলে বলে, কবিতা দিয়ে কী হবে?”
উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের লেখা ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ অবলম্বনে সালেক নাছির উদ্দিনের নির্দেশনায় একটি আবৃত্তি প্রযোজনা ‘দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা’ পরিবেশিত হয়।