গণহত্যা-যুদ্ধাপরাধের ওপর গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান

মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এ বিষয়ে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার’ সুপারিশ উঠে এসেছে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 07:41 AM
Updated : 14 Dec 2017, 07:41 AM

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার নানা দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুইদিনের এই সেমিনারে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যাল ও গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক নানা ইস্যু নিয়েও আলোকপাত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত দুইদিনের এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

এতে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের সাবেক অধ্যাপক,  রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিষ নন্দী।  বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

স্বাগত ভাষণে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের কার্যক্রম তুলে ধরার পর এর পরিচালক অধ্যাপক  ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রমকে আরো বেশি জোরদার করতে আমরা এই সেমিনারটি আয়োজন করেছি।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আশীষ নন্দী আঠারো ও ঊনিশ শতকে ঘটে যাওয়া নানা গণহত্যার ঘটনার উদাহরণ টেনে এনে বলেন, “আমার কৈশোরে দেখা সবচেয়ে নৃশংতম গণহত্যাটি ঘটেছে একাত্তরে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সব নৃশংসতম রূপটি আমি আর কোথাও দেখি না।”

উচ্চতর পর্যায় নয়, স্কুল-কলেজ থেকেই গণহত্যা বিষয়ক সিলেবাস প্রণয়নের পক্ষে জোর দিলেন এই গবেষক।

তিনি বলেন, “একটি ফ্রেমওয়ার্ক করতে হবে, কিভাবে তরুণদের আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞান দান করব। পাঠদান প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের শ্রেণিবিন্যাস করতে হবে, তাদের বয়স উপযোগী করে কোন বিষয়গুলো আমরা তাদের দেখাব বা জানাব। উচ্চতর পর্যায়ে গবেষণা তো চলবেই, পাশাপাশি এই লেভেলে এ শিক্ষাটা যদি সিলেবাসে ঢুকানো যায়, তবে তরুণরাই একদিন ঠিক গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিটা আদায় করে নেবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানকেও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। ইতিহাস কখনো ওদের ক্ষমা করবে না, ক্ষমা করবে না প্রজন্ম। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।”

পরে বায়োলজ্যিকাল, সোশ্যাল মডেল উপস্থাপনায় তিনি যুদ্ধাপরাধ, নৃশংসতার গল্প শুনিয়ে বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, “সামাজিকভাবেই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভৌগোলিক সীমারেখার পার্থক্য নয়, তাদের সঙ্গে ঐতিহাসিক তফাৎ রয়েছে বাংলাদেশের, সেটা আগে এই জনগণকে বোঝাতে হবে। তখন বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণও সম্পৃক্ত হয়ে পড়বে।”

শুধু আলোচনা বা গবেষণা নয়, এবার গণহত্যা বিষয়ক কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের তাগিদ দিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি এখনো নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।   যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াতেও আসছে নানা বাধা।

“সেই বাধা উপেক্ষা করে ইতিহাসের সত্যিটাকে সামনে তুলে ধরতে হবে বা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেই জন্য আমাদের গবেষণা খাতকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে, বিজ্ঞানভিত্তিক এক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।”

প্রথম দিনের সেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জেনোসাইড: বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘মেমোরি অফ জেনোসাইড অ্যান্ড ভায়োলেন্স’, ‘স্টেট, সোসাইটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স’। এ সেমিনারগুলোতে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে প্রবীণ আইনজীবী কামাল হোসেন, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন।

দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে সেমিনার।  সেদিন অনুষ্ঠিত হবে ‘দ্য পলিটিকস অফ জেনোসাইড অ্যান্ড ট্রানজিশনাল জাস্টিস’, ‘প্রিভ্যান্টিং ভায়োলেন্ট  এক্সিট্রিমিজম অ্যান্ড রেডিকেলাইজেশন’, ‘জেনোসাইড অন দ্য রোহিঙ্গা মাইনরিটি’ শিরোনামের বিভিন্ন সেশন।