জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে নানা কর্মসূচি

স্বাধীনতার প্রাক্কালে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা; বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 05:20 PM
Updated : 13 Dec 2017, 06:41 PM

বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ঢাকার রায়ের বাজারে বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর দেশ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।

তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সেই বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়েই শুরু হয়েছে শ্রদ্ধা নিবেদন, যা বৃহস্পতিবার দিনভর চলবে আরও নানা কর্মসূচিতে।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন এই বুদ্ধিজীবীরা

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, “হানাদারবাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।”

তিনি বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন।

“কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামাত ও কয়েকটি ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল। এরা আল বদর, আল শামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।

“বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আমার শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দীন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা প্রমুখ।

“এই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্যই এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।”

স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে মন্তব্য করে তা মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতার আলোকে জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ গড়ার যাত্রায় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।    

ভোরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে, জাতীয় ও দলীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত।

সকাল সোয়া ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল পৌনে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

সকাল পৌনে ৯টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।

সকালে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিকাল ৫টায় পল্টনে মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সেখানে বামপন্থি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা আলোচনায় অংশ নেবেন বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।