বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আব্দুল আজিজের মতো পতাকার কারিগর আর বিক্রেতাদের ব্যস্ততা প্রতিবছরই দেখা যায়।
গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে ৩৫ বছর ধরে পতাকা তৈরি করছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। গাজীপুরের মেঘনা টেক্সটাইল মিলে ১৫ বছর কাজ করার পর টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে চাকরি হারান আজিজ, এরপর থেকেই গুলিস্তানে ভাঙ্গা একটি মেশিনে জাতীয় পতাকা বানিয়ে আসছেন।
ধীরে ধীরে খুলতে আজিজের গলে।পর ঝাঁপি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, টঙ্গীতে পাকহানাদারদের সাথে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে গুলির বাক্স নিয়ে ছুটে চলা- গল্প যেন শেষই হচ্ছিল না।
জানালেন, জাতীয় পতাকা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। তিন মেয়ের বিয়ে, ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানো- সবই পতাকা বিক্রি করেই।
বিজয় দিবস সামনে রেখে দিনে হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্তও আয় করছেন তিনি, একটি পতাকায় লাভ হয় ৫০-৬০ টাকা।
বিজয়ের মাসে দিনে গড়ে তিন থেকে চারশ পতাকা বানিয়েছেন বলে জানান আরেক পতাকা কারিগর রাশেদ আলম। লক্ষ্মীপুরে বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার, যা চলছে পতাকা তৈরির টাকায়।
রাশেদ বলেন, “বিজয়ের মাসে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি, বছরের অন্য সময় যেখানে আয় করি ১৩-১৪ হাজার টাকা সেখানে এবার ডিসেম্বর মাসের শুরুর ১০ দিনেই আয় হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা।”
বিশ বছর ধরে ঢাকায় পতাকা ফেরি করেন ধুপখোলার বাসিন্দা রমজান সরদার। পতাকা বিক্রির আয়েই দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন, বড় মেয়েকে স্কুলেও পড়াচ্ছেন।
“স্কুল-কলেজে ও মিটিংয়ে পতাকা বেশি বিক্রি হয়, তবে বিজয়ের মাসে সাধারণ মানুষও পতাকা কিনে, দিনে ৮০০ থেকে হাজার টাকা আয় হয়,” বলেন রমজান।
গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে বিভিন্ন আকারের পতাকা, বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা মাথার ব্যান্ড, রিবন, হ্যান্ড ফ্ল্যাগ ও টি-শার্ট নিয়ে বসেছেন অনেক হকার। সেখানে কথা হয় পতাকার ব্যবসায় জড়িত মোহাম্মদ সেলিমের সাথে।
তিনি জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পতাকার অর্ডার পান। চকবাজারে তার পতাকার কারখানাও আছে, সেখানে ২০ জন কর্মচারির সময় কাটছে তুমুল ব্যস্ততায়।
সেলিম বলেন, “এখন পতাকার ডিমান্ড বেশি, দিনে হাজারের উপরে পতাকা সাপ্লাই দেই, আয় ২০-২৫ হাজার টাকা।”