আনিসুল হক: টিভিমুখ থেকে মেয়রের চেয়ারে

টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আনিসুল হক তৈরি পোশাক ব্যবসায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন, ঢাকার অবস্থা পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও সে দায়িত্ব শেষ করে যেতে পারলেন না তিনি।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2017, 06:04 PM
Updated : 30 Nov 2017, 07:56 PM

৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান।

মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজিযাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।

রাজনীতিতে কোনো দলে নাম না লেখানো আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

আনিসুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নানা বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তার বাবার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কবিরহাটে। তার বাবা শরীফুল হক ছিলেন আনসারের কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন আনিসুল হক। আশির দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বিকাশের পর্বে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কারখানায় চাকরি নিয়ে এক সময় নিজেই ব্যবসা শুরু করেন।

১৯৯৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত জলসা অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আনিসুল হক

আশি ও নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় বিটিভির ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন আনিসুল হক।

তবে পরে টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই। ২০০৫-০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে তিনি হন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আনিসুল হক

২০১০ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আনিসুল হক। এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএরও সভাপতি ছিলেন তিনি।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের মেয়ে মেয়ে তানিশা ফারিয়ামান হকও এই গ্রুপের পরিচালক। আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক এবং রুবানা হকের মেয়ে ওয়ামিক উমাইরাও গ্রুপটির পরিচালক।

মোহাম্মদী গ্রুপের মালিকাধীন দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন নাভিদুল। ওয়ামিক উমাইরা স্নাতক শেষ করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় কাজ করছেন। তানিশা ফারিয়ামান যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের সিমন্স কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আনিসুল হকের ভাই। তার আরেক ভাই ইকবাল হক চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। হেলাল হক নামে তার আরেক ভাই যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় ছিলেন আনিসুল হক।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে ওই সড়ক দখলমুক্ত করে সিটি করপোরেশন।

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় তার সমালোচনা করেন অনেকে।

বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এরইমধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন আনিসুল হক। তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি ‘বাগ এ মোনয়েম’র অবৈধ দখলে থাকা অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে।