৭ মার্চ কেন জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস নয়: হাই কোর্ট

একাত্তরে যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, সেই ভাষণের দিন ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 07:39 AM
Updated : 5 Feb 2020, 12:02 PM

এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল দেয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের দায়ের রিট আবেদনের সাড়া দিয়ে ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি রুলে আরও দুটি বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

এর একটিতে বলা হয়, একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেস্থানে যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্তী ইন্ধিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যেস্থানে সেই স্থানে মঞ্চ পুননির্মাণ কেন করা হবে না।

এছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনি উচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নও রুলে রাখা হয়েছে।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব, অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, গণপূর্ত সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া রুলের প্রেক্ষাপটে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- সে বিষয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও অর্থ সচিবকে হাই কোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।   

হাই কোর্টে আইনজীবী বশির আহমেদ রিট আবেদনকারী পক্ষে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

শুনানিতে বশির আহমেদ বলেন, “১৯৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপ্রিম কোর্ট দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। এ কারণে আমি রিট দায়ের করি।

“বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে স্থানটিতে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে।”

তখন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি কাজী রেজাউল হক বলেন, “বললে তো অনেক কথা চলে আসে…যে মঞ্চটায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন কিংবা যে জায়গাটায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করেছিল, বা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পন করেছিলেন, যেখানে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো যেন না থাকতে পারে সেজন্য সেখানে করা হল শিশুপার্ক।”

এ সময় বশির আহমেদ বলেন, “আগ্রার তাজমহল সংরক্ষণে বিষয়ে তদারকি করতে ছুটির দিনে ফুল কোর্ট বসে আদেশ দিয়েছিল ভারতের আদালত। আমাদের বিষয়েও আদেশ হতে পারে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে।”

এরপর বিচারপতি রেজাউল বলেন, “ভারতে তো অফিসিয়াল সম্বোধন আছে, ‘জয় হিন্দ’। আমাদের এখানে কোনো সম্বোধনই তো নাই। আমাদের এখানে ছিল ‘জয় বাংলা’। এখন ‘জয় বাংলা’ বললে মনে করে রাজনৈতিক। ওয়ান পার্টি স্লোগান।”

সাড়ে চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি ঘোষণা দেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে।

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নিয়েছে ইউনেস্কো।