একাত্তরে ঢাকায় একদল তরুণকে নিয়ে গঠিত এই প্লাটুনের গেরিলা হামলায় বেশ সমস্যায় পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। এই যোদ্ধাদের তখন বলা হত ‘বিচ্ছু’।
মুক্তিযুদ্ধে চুল্লুর ভূমিকা তুলে ধরে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য কামরুল হক স্বপন বীরবিক্রম বলেন, “যুদ্ধের প্রশাসনিক সহায়তা বলতে যা বোঝায় তা তিনি সব সময় দিয়েছেন। অস্ত্র, গুলি রাখার জন্য আমরা তার বাসা ব্যবহার করতাম। অনেক সময় নিজে গাড়ি চালিয়ে অপারেশনেও গেছেন তিনি। পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় সবগুলো অপারেশনে তার অংশগ্রহণ ছিল।”
বিদেশি ওষুধ কোম্পানির চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন মাসুদ সাদেক চুল্লু।
যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তিনি সব সময় অপারেশনের সঙ্গে ছিলেন জানিয়ে তার আরেক সহযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, “ঢাকার সব অপারেশনে তার সম্পৃক্ততা ছিল। কখনও কখনও নিজের গাড়ি চালিয়ে অপারেশনে নিয়ে গেছেন। তাকে ছাড়া এসব অপারেশন অসম্ভব ছিল।”
যুদ্ধকালে ৩০ অগাস্ট গ্রেপ্তার হয়ে বিজয়ের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন মাসুদ সাদেক চুল্লু, ওই সময় তার পুরো শরীরে ছিল অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন।
সেই স্মৃতিচারণ করে ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সদস্য হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক বলেন, “আমরা কয়েকজন তাকে আনতে যাই। নির্যাতনের কী বর্ণনা দেব... তিনি বেঁচে ফিরতে পেরেছেন তা ঠিক, কিন্তু শরীরের কোনো অংশ বাকি ছিল না, যেখানে সিগারেটের আগুনের দাগ পড়েনি।
৭৪ বছর বয়সী মাসুদ সাদেক চুল্লু সোমবার বনানীতে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের ছোট ভাই এবং বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের দেবর।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একমাত্র মেয়ে সানজানা সাদেক বুধবার দেশে ফেরার পর তাকে বনানীতে সমাহিত করা হয়।
দুপুরে তার মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘর থেকে বনানী ওল্ড ডিওএইচএসের বাসায় আনা হয়। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন চুল্লুর সহযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যরা।
মুক্তিযোদ্ধা চুল্লুর ভাতিজা আফসান নোমান বলেন, “চাচা খুবই জলি মাইন্ডের ছিলেন। আমাদের সব সময় উৎসাহ দিতেন এবং সবাইকে অনেক আদর করতেন।”
আসরের নামাজের পর বনানী ওল্ড ডিওএইচএস মসজিদে গেরিলা যোদ্ধা চুল্লুর জানাজায় অন্যদের সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অংশ নেন।
এরপর বিকাল সোয়া ৫টার দিকে বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে শায়িত করা হয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা ও সালাম জানান ক্র্যাক প্লাটুনে তার সহযোদ্ধারা।