তিন মাস পর সচল হল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুতে তিন মাস দুই দিন বন্ধ থাকার পর পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে আবার শুরু হয়েছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 12:00 PM
Updated : 12 Oct 2017, 02:13 PM

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রমে ট্রাইব্যুনালে নতুন দুই সদস্য বিচারপতি আমির হোসেন ও আবু আহমেদ জমাদারও উপস্থিত ছিলেন। 

এদিন গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া (৬৫) ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক শুনানির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা ছিল।

বেলা সাড়ে ১১টায় তিন বিচারক এজলাসে বসার পর শুরুতেই ট্রাইব্যুনালের প্রয়াত চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হককে স্মরণ করে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।

পরে বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ট্রাইব্যুনালের নতুন দুই বিচারকের সঙ্গে প্রসিকিউশন এবং উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পরিচয় করিয়ে দেন।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সহযোগিতায় ট্রাইব্যুনাল সুষ্ঠু ও ধারাবাহিকভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করে আসছে। সহযোগিতার সেই ধারাবাহিকতা উভয় পক্ষই অব্যাহত রাখবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ প্রসিকিউশন দলের ১১ সদস্য এবং আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষই পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালকে অভিনন্দন জানায়।

বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের শুরু থেকে প্রসিকিউশন দায়বদ্ধ। ঐতিহাসিক এ বিচার কাজের শুরু থেকে প্রসিকিউশন সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সে সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাই কোর্ট ভবনে কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়ায় ২০১২ সালরে ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়।

পরে মামলা কমে আসায় ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

এরপর থেকে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন বিচারকের ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গত ১৩ জুলাই তার মৃত্যু হলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়; বিচার কার্যক্রমও থমকে যায়।  

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে ছিলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বিচারক হাই কোর্টে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তাকে সেখানেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

আর হাই কোর্টের বিচারপতি আমির হোসেন এবং পিআরএলে থাকা জেলা ও দায়রা জজ মো. আবু আহমেদ জমাদারকে ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দিয়ে বিচারপতি শাহিনুর ইসলামকে চেয়ারম্যান করে বুধবার হাই কোর্টের সমমর্যাদার এই বিশেষ আদালত পুনর্গঠনের আদেশ জারি করে সরকার।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৮টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে আপিল বিভাগে সাতটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ১৭টি মামলা। 

আপিলের চূড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সক্রেটোরি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আর জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ভোগ করছেন আমৃত্যু কারাদণ্ড।

সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি চলার সময় জামায়াতগুরু গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলেরও নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

প্রসিকিউশন দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন জেলার ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩৩টি মামলা রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে ৫৩টি মামলায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।