সাত খুন: সাজা দ্রুত কার্যকর চান নজরুলের স্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে থেকে ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও রায়ে সন্তুষ্ট ওই ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 11:56 AM
Updated : 22 August 2017, 01:08 PM

আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার যে রায় দেয়, তাতে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

নিম্ন আদালতে নয়জনকে দেওয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায়ে কোনো পরিবর্তন আনেনি হাই কোর্ট।

হাই কোর্টের রায় শোনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী বিউটি বলেন, “আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্টও এ রায় বহাল রাখুক, দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক।”

নূর হোসেন, তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ আসামিদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।  

আসামিরা যে ধরনের অপকর্ম করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিউটি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। দুই মামলার তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

প্রধান আসামি নূর হোসেন (ফাইল ছবি)

নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে এ মামলার আসামিদের বিচার শুরু করেন। একসঙ্গে দুই মামলার বিচার শেষে চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন তিনি। তাতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।

তার বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে হাই কোর্টের এই রায় আসে।

রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া নূর হোসেনসহ অন্যান্য আসামিদের ‘কনডেম সেলে’ রাখার দাবি জানিয়েছেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। নূর হোসেনকে ভারত থেকে এনে জজ কোর্ট ও হাই কোর্ট ফাঁসি দিয়েছে। বিধি মোতাবেক নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, মাসুদ রানাসহ অন্যান্য আসামিদের কনডেম সেলে রাখার কথা, কিন্তু তাদেরকে সাধারণ কয়েদী সেলে জামাই আদরে রাখা হয়েছে।”

২০১৪ সালে হত্যাকাণ্ডের পর শহীদুলই প্রথম দাবি করেছিলেন, র‌্যাবকে ব্যবহার করে তার জামাতাকে হত্যা করা হয়েছে।

রায়ের পর হাই কোর্টে বিজয় চিহ্ণ দেখান নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম

তার ওই অভিযোগ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড়া সৃষ্টি হয়। তারপর আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা তারেক ও র‌্যাবে তার তিন সহকর্মীকে। সামরিক বাহিনীর চাকরিও হারান তারা।  

রায়ে সন্তোষ জানিয়ে নজরুলের বন্ধু নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের সাংবাদিকদের বলেন, “যে সন্তান মারা গেছে, সেই সন্তান আর ফিরে পাব না। কিন্তু সন্তান হত্যায় আমরা উচ্চ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এই বিচারে আমরা সন্তুষ্ট, আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।”

“সন্ত্রাসীরাও এখন চিন্তা করবে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে কেউ পার পাবে না, এর সাজা তাকে ভোগ করতে হবে,” বলেন তিনি।

মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকরের দাবিও জানান তাজুলের বাবা।