তা হলে ভবনের নকশায় ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এ্যান্ড গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জিং’ এর ব্যবস্থা করলে তবেই মিলবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ছাড়পত্র।
পাঁচ বছর ধরে এ নিয়ে উদ্যোগ থাকলেও কয়েক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন ভবনের ক্ষেত্রে বিধানটি বাধ্যতামূলকের পাশাপাশি মহানগরের তিন লক্ষাধিক পুরনো ভবনেও এমন ব্যবস্থা করতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেবে রাজউক।
ঢাকায় পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতেই এই উদ্যোগ বলে জানান রাজউক সদস্য জিয়াউল হাসান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজধানীর কোটি জনসংখ্যার চাপে ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নেমে যাচ্ছে দ্রুত। এ অবস্থায় ভূ-উপরিস্থ পানির সঠিক ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানি স্তরও রিচার্জ করাতে হবে।”
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও ভূগর্ভে সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যমান ‘ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ’ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে।
“সব অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
সরকারের অনুমোদন পেলে ঢাকা মহানগরে নকশা অনুমোদনে ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ’ বাধ্যতামূলক করে সংযোজিত নতুন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানান জিয়াউল।
তা হলে এ বছর থেকেই নতুন ভবনের নকশায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুযোগ রাখতে হবে।
পুরনোগুলোর বিষয়ে কী হবে- জানতে চাইলে রাজউক সদস্য বলেন, “পুরনো ভবনগুলোয় বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে ‘স্পেস ও ডিজাইনের’ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে উৎসাহ জোগাতে উদ্যোগ থাকবে।”
রাজধানীতে এ বিধান কার্যকর করা গেলে এরপর দেশের সব নগরকেও এমন বাধ্যবাধকতার আওতায় আনার প্রচেষ্টা নেওয়া সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে ৩ লাখ ২০ হাজারের মতো হোল্ডিংয়ের মধ্যে পৌনে তিন লাখই আবাসিক ভবন। এর মধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ভবন।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলছেন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপে এখনই সময়।
“শুধু আইন-বিধি করলেই হবে না। সেই সঙ্গে এর প্রায়োগিক দিকটি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।
আমিনুর বলেন, “খুব সহজেই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও মাটিতে রিচার্জ করা যায়। এর জন্যে বড় ধরনের প্রযুক্তির দরকার পড়বে না। এটা ব্যয়বহুলও না, প্রাইমারি টেকনোলজি বলা চলে, খরচও তেমন নেই। সদিচ্ছা থাকলেই হবে।”
এ স্থপতি জানান, ছাদের পানি নির্ধারিত পাইপের মাধ্যমে তা জলাধারে ধরে রাখতে হবে। এটা গোসল, ধোয়া-মোছাসহ নানাভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভে রিচার্জ করার একটা ব্যবস্থাও থাকবে। একটা পাইপ দিয়ে পানি যাবে যেখানে বালুস্তর রয়েছে, যাতে পানি শোষিত হয়ে নিচে নেমে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার বছর ধরে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প সফলতার সঙ্গে চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা রাজধানী ও উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাশাপাশি রিচার্জিংয়ের পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছি।
“ক্যাম্পাসের চারুকলা ও জহুরুল হক হলে অত্যন্ত সফলতা পেয়েছি। দুই ভাবে কাজটি করা যাচ্ছে- একটি পানি ধরে রেখে নানামুখী ব্যবহার করা হচ্ছে; পাশাপাশি ভূগর্ভেও রিচার্জ করা হচ্ছে।”
অধ্যাপক মতিন মনে করেন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উদ্যোগ শুধু রাজধানী নয়, সব সবখানে নেওয়ার সময় এসেছে।