ছেলের জন্য গর্ব করেন ফারাজের মা

হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মা সিমিন হোসেন বলেছেন, ছেলের জন্য ‘গর্ববোধ’ করেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2017, 05:32 PM
Updated : 30 June 2017, 06:34 PM

ভয়াবহ ওই হামলার বর্ষপূতি উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর গুলশান টাওয়ারের এক অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

গত ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে মারা যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং তার বন্ধু অবিন্তা কবীর ও ইশরাত আখন্দ।

ঘটনার পর গণমাধ্যমে খবর আসে, জিম্মিদশাই জঙ্গিরা ফারাজকে বের হয়ে যেতে বললেও তিনি তার অপর দুই বন্ধুকে ছাড়া যাবেন না জানালে অন্যদের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়।

সিমিন হোসেন বলেন, “প্রতিটি মা স্বপ্ন দেখে তার বাচ্চাকে নিয়ে, আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আমি একটা জিনিসে অবাক হয়েছি, ১ জুলাইয়ের পরে যে সম্মানটা আমি পাচ্ছি সেটা অকল্পনীয়। একটা মা চায় যে, তার সন্তান তাকে গর্বিত করবে, অবশ্যই সে (ফারাজ) আমাকে করেছে।”

তিনি বলেন, “সে একটা আদর্শ ছেলে ছিল, আদর্শ বাচ্চা ও আদর্শ ছাত্র; সব দিক দিয়ে সে আমার একটা আইডিয়াল ছেলে ছিল। অবশ্যই আমি তাকে নিয়ে অনেক গর্ব করি। আমাকে প্রতিদিন এখনও অবাক করে, সে চলে যাওয়ার পর যেভাবে সারা দুনিয়া ওকে অনার করছে, কথা বলেছে সেটা কিন্তু আমার ভাবনার বাইরে। আমি নিজেও এটা চিন্তা করিনি।”

সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য ২০১৬ সালে ফারাজ হোসেনকে দেওয়া মাদার টেরিজা (মরণোত্তর) পুরস্কার গ্রহণ করেন তা মা সিমিন হোসেন, ভারতের হারমনি ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার দেয়।

লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন হোসেন ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক।

গত এক বছর ছেলের কৃতিত্ব নিয়ে বহু পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখির বিষয় তুলে ধরে সিমিন হোসেন বলেন, “একটা বাচ্চা একটা মাকে এতো প্রাউড করতে পারে তা এক বছর আগেও বুঝতাম না। ওকে নিয়ে মানুষ কথা বলে, গর্ব করে, লেখালেখি করে, এই জিনিসটা নিয়ে আমি নিজে অবাক হই।

“তখন আমি মনে করি, ছেলে বেঁচে থাকলে আমাকে অনেক প্রাউড করত, কিন্তু চলে যাওয়াতে... এত বড় কাজ করাতে অনেক বেশি, সারা দুনিয়াকে সে কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে যে মানবতা কী।”

নিজের পরিচয় ‘ফারাজের মা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি গর্ব করি সারা দুনিয়া আমাকে ফারাজের মা হিসেবে চিনবে। এর চেয়ে বড় কিছু আমার পাওয়ার আছে বলে মনে হয় না।”

দেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে সিমিন হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে বিশ্বাস করে না। তরুণদের বলব, নিজের দেশের মূল্যবোধকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্লোজড হও, কথা বল। আমার ছেলে যেটা করেছে, সেটা হল জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধের কাজ। আমি বাংলাদেশের সকল তরুণকে বলব, সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে না বল।”

হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় সরকারের উদ্যোগ, মামলা, তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ফায়াজের মা সিমিন।

এ সময় ফারাজের বড় ভাই যায়েফ হোসেন বলেন, “আমরা ফারাজকে নিয়ে গর্ব করি। সে বন্ধুত্বের এক নিদর্শন রেখে গেছে। আমি ফারাজের ভাই হয়েও ফারাজের মতো হতে চাইব।

“এখন থেকে ১ জুলাই আমি শুধু আমার ভাই ফারাজকে হারানোর ঘটনাকে স্মরণ করব না, সেই সাথে তার যে আদর্শ সেটাও স্মরণ করতে হবে।”