ভাস্কর্য অপসারণে বিচারপতি সিনহাকে হেফাজতের স্মারকলিপি

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ আখ্যায়িত করে তা অপসারণের দাবিতে প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2017, 11:54 AM
Updated : 14 Feb 2017, 11:54 AM

মঙ্গলবার সকালে ইসলামী সংগঠনটির একটি প্রতিনিধি দল সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে স্মারকলিপিটি দিয়ে আসে। তা গ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের একান্ত সচিব আতিকুস সামাদ।

সামাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৭-৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল স্মারকলিপি দিতে। মাজার গেইট থেকে এ স্মারকলিপি আমি গ্রহণ করেছি।”

স্মারকলিপিতে হেফাজত ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী ও নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী স্বাক্ষর করেছেন।

এর আগেও এ ধরনের দু-একটি সংগঠন একই দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বলে জানান আতিকুস সামাদ।

রোমান যুগের ন‌্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলের এই ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে ‘লিলি ফোয়ারা’য় গত বছরের ডিসেম্বরে স্থাপন করা হয়। এটি নির্মাণ করছেন ভাস্কর মৃণাল হক।

ভাস্কর্যটিতে চোখ বাঁধা এক নারীর ডান হাতে তলোয়ার, বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা। তলোয়ারটি নিচের দিকে নামানো আর দাঁড়িপাল্লাটি পরিমাপ করছে এমন ভঙ্গীতে ধরা।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য যার বিরোধিতা করছে হেফাজতে ইসলাম

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত আইন শাস্ত্রের গোড়াপত্তন হয় রোমান যুগে। বাংলাদেশেও আইন শাস্ত্রে রোমান আইন পড়ানো হয়ে থাকে। রোমানদের লেডি জাস্টিস গ্রিকদের কাছে পরিচিত ছিল দেবী থেমিস হিসেবে।

এটি ‘অনৈসলামিক’ দাবি করে হেফাজতের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, “স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আজ্ঞাবাহী এক শ্রেণির পেইড ও প্রপাগান্ডিস্ট মিডিয়া ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃহত্তর তৌহিদি জনতার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

“তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল, পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংযোজনের দাবিও করছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনও সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।”

ভাস্কর্য স্থাপন সংবিধানের ২ (ক), ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলেও দাবি করেছে হেফাজত।

সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।

১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে- ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন … বিলোপ করা হইবে।

১৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে- উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা-ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে:     

(ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা, অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারী খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা;    

(খ) সমবায়ী মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে সমবায়সমূহের সদস্যদের পক্ষে সমবায়সমূহের মালিকানা; এবং           

(গ) ব্যক্তিগত মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা৷