গাজীপুরের পাতারটেক ছিল আত্মঘাতী জঙ্গিদের আস্তানা: পুলিশ

গাজীপুরের পাতারটেক এলাকার অভিযানে নিহতরা আত্মঘাতী জঙ্গি ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ, তবে তাদের সর্বশেষ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি তারা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2016, 03:21 PM
Updated : 9 Oct 2016, 03:37 PM

শনিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেকের একটি বাড়িতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াটের অভিযানে নিহত হন সাতজন।

নিহতরা সবাই গুলশানে হামলাকারীদের দল ‘নব‌্য জেএমবি’র সদস‌্য ছিলেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান। নিহতদের মধ্যে দলটির ‘নেতা’ ফরিদুল ইসলাম আকাশ ছাড়া অন‌্য কারও পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে কর্মরত অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই বাসায় নব্য জেএমবির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মঘাতী দলের সদস্যরা বসবাস করত। তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে ওই বাসায় আশ্রয় নিত। তারা আক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিল।”

ওই আস্তানায় থাকা জঙ্গিদের কী পরিকল্পনা ছিল, তা এখনও সুনিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানান অভিযানে থাকা গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার।

“নব্য জেএমবির টার্গেট অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিক। এবার তারা কী টার্গেট করেছিল, তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তা তদন্ত করা হচ্ছে।।”

গাজীপুরের আস্তানায় ওঠার আগে আকাশ কল্যাণপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিল বলে তথ‌্য পাওয়ার কথা জানান ছানোয়ার।

পাতারটেক এলাকার বাড়িটির দোতলা জঙ্গিরা তিন মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।

বাড়িটির মালিক সৌদি প্রবাসী সোলেমান সরকার। তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর স্কুল ও কলেজের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ওসমান গণি বাড়িটি দেখাশোনা করেন।

সেখানে আকাশের অবস্থানের তথ‌্য গোপন সূত্রে খবর পাওয়ার পর অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ জানায়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর আকাশের মা, দুই বোনসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ‘জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য’।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ইতলী গ্রামের আকাশের (২৫) পুরো পরিবার জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত বলে পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার জানান।

আকাশের মা ও দুই বোন জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন; পলাতক রয়েছেন তার বাবা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই ও একটি কম্পিউটারসহ আকাশের মা ফুলেরা বেগম, দুই বোন শাকিলা খাতুন ও সালমা খাতুনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ‘জেএমবির আত্মঘাতী দলের’ সদস‌্য। তারা বাবা আবু সাঈদ পলাতক।

তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আকাশ ২০১৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করেছিল।

‘তিরস্কৃত হয়েছিল আকাশ’

পুলিশের বক্তব‌্য অনুযায়ী, ‘নব্য জেএমবি’র সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর আস্থাভাজন ছিলেন নুরুল ইসলাম মারজান ও আকাশ। তারা দুজন বিভিন্ন হামলা সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতেন।   

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত পলাতক মারজান গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে হামলা চালিয়ে বিদেশিদের হত‌্যার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেজন‌্য সংগঠনে প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি।

পাতারটেক এলাকার এই বাড়িতে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, যাতে নিহত হয় ৭ জন

অন্যদিকে পুলিশের বক্তব‌্য অনুযায়ী, আকাশের দায়িত্ব ছিল শোলাকিয়ায় হামলা সমন্বয় করা, কিন্তু তা সফল হয়নি।

“শোলাকিয়ার ঘটনায় নব্য জেএমবির সদস্যরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় আকাশকে তিরস্কার করা হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল,” বলেন ছানোয়ার।

গত ১ জুলাই গুলশানে হামলার ছয় দিনের মধ‌্যে ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টা হয়। তবে নিরাপত্তা চৌকিতে আটকে গেলে এক হামলাকারী নিহত হন, ধরা পড়েন একজন। তবে জঙ্গিদের হামলায় মারা যান দুই কনস্টেবল।

পাতারটেকে নিহতদের মধ‌্যে আকাশের নাম প্রকাশ করা হলেও বাকি ছয়জনের কোনো নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ছানোয়ার বলেন, “ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হতে চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকে অনেকভাবে নিহতদের পরিচয়ের বিষয়ে তথ্য দিচ্ছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”

লাশগুলো শনিবার রাতেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সবার লাশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান জানান।

এর আগে গুলশান ও কল‌্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের লাশ স্বজনরা দাবি না করায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ‌্যমে দাফন করা হয়েছিল।