সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ইতলী গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে আকাশ (২৫) তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০১৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করেন তিনি।
শনিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পাতারটেক এলাকায় পুলিশ ও সোয়াটের অভিযানে সন্দেহভাজন সাত জঙ্গির মৃত্য হয়। নিহতদের মধ্যে ‘নব্য জেএমবির’ শীর্ষ নেতা ‘আকাশ’ রয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এডিসি সারোয়ার হোসেন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি, আকাশের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।”
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওয়াহেদুজ্জামান জানান, এক বছর আগে জেএমবি নেতা আকাশ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলী গ্রামে আকাশের পরিবারের দিকে বিশেষ নজর রাখছিলেন তারা।
আকাশের বাবা আবু সাঈদ তার সাত-আট বছর বয়সী এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ‘গা-ঢাকা দিয়েছেন’ জানিয়ে ওসি বলেন, “আকাশদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।”
গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রওশন আলী বলেন, “আকাশের প্ররোচনাতেই তার মা ও দুই বোনসহ প্রতিবেশীরা জেএমবি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
আকাশের গ্রাম বড়ইতলীর বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, ফরিদুল ইসলাম আকাশ দুই বছর আগে বাড়ি থেকে লাপাত্তা হন। তার বাবা আবু সাঈদও গত তিন মাস বাড়ি আসেন না।
“এ পরিবারের লোকজন কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করত না। পরিবারটি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে ঈদের একদিন আগে ঈদ করত।”
গ্রামে আকাশের আরও ‘সহযোগী আছে’ মন্তব্য করে ইসমাইল বলেন, আকাশের মা ও দুই বোন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের ঘনিষ্ঠ অন্তত তিনটি পরিবারের ১১ থেকে ১২ জন গা-ঢাকা দিয়েছে।
আকাশের মৃত্যুর খবর শুনে এলাকার লোকজন ‘খুশি হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।
দুই বছর আগে সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করেন আকাশ।
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান বলেন, ২০১০ সালে ভর্তির পর ফরিদুল ইসলাম আকাশ ২০১৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করে চলে যান। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পরে অনেকবার কলেজে এসে তার সম্পর্কে তথ্য নিয়েছে।
আকাশ সম্পর্কে আর কিছু বলতে পারেননি অধ্যক্ষ।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত বছর অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে বেশ কয়্জেন জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার হয়। সে সময় আকাশ গ্রেপ্তার না হলেও মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
“তাদের কাছ থেকে জব্দ করা কম্পিউটারে তথ্য পাওয়া গেছে; বিভিন্ন চায়নিজ ও জাপানি কুংফু-কারাতের ছবি দেখে তারা নিজেরাই শারীরিক কসরতের প্রশিক্ষণ নিতেন।”
পুলিশ সুপার সে সময় বলেছিলেন, “তারা নিজেদের শরীরে টাইমবোমা যুক্ত করে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনায় ছিল। আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে কাফের, মুরতাদ হত্যা করে অনায়াসে বেহেশতে প্রবেশ করবে - এমন বিশ্বাস থেকে তারা সংগঠিত হয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা।”
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন গোলাম মুজতবা ধ্রুব।]